চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের খোন্দকার পাড়ার মল্লাপাড়া গ্রামে অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ পরিবারের পাশে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছে ৭ ভিক্ষুক। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
মানুষকে সাহায্য করতে ধনী হতে হয় না, ইচ্ছা থাকলে গরিব ও নিঃসম্বল মানুষও কিছু করতে পারে তার প্রমান করেছে ওই সাত ভিক্ষুক।
রোববার (৩ এপ্রিল) সকালে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে মোহাম্মদ মুফিজ, মোহাম্মদ ইসমাইল, মো. রাসেল, মো. বেল্লাল হোসেন, মো. আবদুল শফিক, ভান্ডারি এ সাতজন এসব ইফতার সামগ্রী নিয়ে হাজির হন।
ভিক্ষুকদের এমন চিত্র দেখে এলাকাবাসী ভিড় জমিয়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ তাদেরকে নানানভাবে আপ্যায়ন করার জন্য ডাকছে। এলাকাবাসী বলছেন এমন চিত্র তারা আগে কখনো দেখেনি, সর্বপ্রথম এ ধরনের চিত্র দেখে অনেকেই হতবাক হয়ে গেছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন জল বলেন, অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া মানুষের অসহায়ত্ব দেখে চন্দ্রঘোনার সাত জন ভিক্ষুক তাদের অর্জিত আয় থেকে ইফতার সামগ্রী নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। যা সমাজের বিত্তবানদের জন্য একটি উদাহরণ তৈরী করেছে। ভিক্ষুকদেরও দেওয়ার মতো মন আছে যা তারা প্রমাণ করেছে। এমন চিত্র দেখে আমিও অবাক হয়েছি।
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়ে জানতে চায়লে ভিক্ষুক মোহাম্মদ মুফিজ বলেন, আমরা সারাজীবন তাদের থেকে ৫ টাকা ১০ টাকা, চাল, ডাল, কত কিছু নিয়ে যাচ্ছি যা দিয়ে আমরা সংসার অতিবাহিত করি। কিন্তু যারা আমাদেরকে এসব দিয়ে জীবন বাঁচিয়ে রেখেছে তারাই আজকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিভীষিকাময় জীবন যাপন করছে। তাই আমরা সাত জনে মিলে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের এসব সামান্য ইফতার সামগ্রী দিয়ে কিছুই হবে না তাদের। তবে আমাদের মনে একটু প্রশান্তি পেয়েছি তাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে।
আরেক ভিক্ষুক মো. বেল্লাল হোসেন বলেন, ভিক্ষা করতে এসে অগ্নিকাণ্ডের চিত্র দেখে আমরা হতবম্ভ হয়েছিলাম। এসেছিলাম প্রতিদিনের মতো তাদের কাছ থেকে কিছু চাইতে, কিছু নিয়ে যেতে। কিন্তু তাদেরই কিছু নেই খাওয়ার মতো। তখন আমার পাশ্ববর্তী আরও কয়েকজন ভিক্ষুক প্রতিবেশীর সাথে কথা বলে সামর্থ অনুযায়ী সামান্য কিছু ইফতার সামগ্রী নিয়ে আসি। আমাদের নিয়ে আসা এসব ইফতার সামগ্রী তারা সাদরে গ্রহণ করেছে। এতেই আমরা অনেক আনন্দিত।
এ বিষয়ে চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিচ আজগর বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ আমি প্রথম দেখেছি এবং তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তাদের অনেকদিনের ভিক্ষা করা আয়ের টাকা দিয়ে তারা এই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। যা এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। আমি চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
প্রসঙ্গত, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে সর্বপ্রথম খাদ্য সামগ্রী ও ঘর নির্মাণের জন্য টিন নিয়ে হাজির হন স্থানীয় সাংসদ ড. হাসান মাহমুদ। এরপর বাংলদেশ আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।