ভারী বৃষ্টি—অতিবৃষ্টিতে ডুবছে চট্টগ্রাম নগরীর বড় একটি অংশ। আর আবহাওয়া অফিস বলছে অতিবৃষ্টি অব্যাহত থাকবে আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত। নিম্নাঞ্চল ডুবার সঙ্গে পাহাড় ধসের শঙ্কায় আছে প্রশাসন। শুক্রবার (৪ আগস্ট) থেকে জেলা প্রশাসন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরতদের নিরাপদে সরিয়ে আনতে কাজ করছে।
শনিবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৫টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসের শঙ্কায় আমরা ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরতদের নিরাপদে সরিয়ে আনা শুরু করেছি। শনিবারও আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে তা অব্যাহত আছে। মতিঝর্ণা, আকবরশাহ, সীতাকুণ্ডসহ যেখানে যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে সেখানে আমাদের টিম কাজ করছে। ইতোমধ্যে আমরা ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র চালু করেছি।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস সহকারী কর্মকর্তা শ্রীকান্ত কুমার বসাক বলেন, বিকেল ৩টা থেকে গত ২৪ ঘন্টায় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস ৬৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। একই সময়ে আমবাগান অফিসে ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত ভারী এবং অতিবৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।
এর আগে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছিল আমবাগান আবহাওয়া অফিস। এতেই চির চেনা রূপ ফিরে পায় চট্টগ্রাম নগরী। বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও অলি-গলি এমনকি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়িও। শুক্রবার তিনি পানিবন্দি থাকলেও শনিবার রিক্সায় চড়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন।
শনিবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে নগরীর বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও সিএন্ডবি এলাকা, কুয়াইশ সড়ক, শোলকবহর, ষোলশহর, বাকলিয়া মিয়াখান নগর, মাস্টারপোল, চকবাজার, ঘুরে দেখা গেছে—সড়কজুড়ে পানি। বাদুরতলা, কাপাসগোলা, বাকলিয়ার সড়কে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা ও নোংরা পানিতে সয়লাব। পানির দুর্ভোগের সঙ্গে নালার ময়লা বাড়িয়ে ভোগান্তি।
এরজন্য নগরবাসী দায়ি করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে। কারণ সেনাবাহিনী ৩৬টি খালের কাজ করলেও চসিকের অধীন ২১টি খালের কারণে সুফল মিলছেন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের।
নগরীর আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকা, সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ আবাসিক, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ নগরীর নিচু এলাকার সড়কগুলোতে হাঁটুপানি উঠে জোয়ারের সময়। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে ছোটপুল-বড়পুল, গোসাইলডাঙ্গাসহ হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায়।
চট্টগ্রাম নগরীর জলবদ্ধতা নিরসনকল্পে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। গত ২ মে সেনাবাহিনী জানিয়েছিল—৭৬ দশমিক ২৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
তবে নগরীর ৫৭ খালের মধ্যে সেনাবাহিনী ৩৬টি খাল নিয়ে কাজ করলেও ২১টি খালের সমস্যা নগরবাসীকে ভোগাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদুর রহমান। এই শঙ্কার কথা তিনি গত ২ মে দুপুরে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রকাশ করেছিলেন। ঠিক তিন মাসপর তার কথাই সত্য প্রমাণিত হলো।
সিডিএ’র এই প্রকল্পের সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও একটি উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। দুটো প্রকল্পের ব্যয় প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা। দুটো প্রকল্প শেষ হলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।