পাহাড়ি জনপদ লংগদুতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালকদের দৌরাত্ম্য। ফলে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রতিদিন উপজেলার মাইনী, বাইট্টাপাড়া, লংগদু সদর এবং প্বার্শবর্তী মাইনী-দীঘিনালা, গাউসপুর-বৈরাগী-ভাসান্যাদম, চৌমুনী-গুলশাখালী-রাজনগর এবং কালাপাকুজ্জ্যা-বাঘাইছড়ি সড়কে বের হলেই দেখা যায় উঠতি বয়সের ছেলেরা বেপরোয়া গতিতে বিভিন্ন মডেলের মোটরসাইকেল চালিয়ে থাকেন। এদের বেশির ভাগই ১৫-১৬ বছর হতে শুরু করে ২০-২২ বছর বয়সী। ওই সব চালকরা যেকোনো রাস্তায় মোটরসাইকেল বেপরোয়া গতিতে ও প্রচন্ড শব্দ করে চালিয়ে বেড়ায়। তাদের এমন বেপরোয়া গাড়ি চালনায় আতংকিত হয়ে পথ চলতে হয় পথচারীদের।
সচেতন মহলের অভিমত, এসব অপ্রাপ্ত বয়স্ক তরুণরা এমন ভাবে গাড়ি চালায় তাদের গাড়ির শব্দ এবং দ্রুতগতির বেপরোয়া চালানো দেখে অনেকেই হতবাক না হয়ে পারছে না। সড়কে বের হলে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তারা নিয়ম কানুন না মেনে বেপরোয়া ভাবে মোটর সাইকেল চালিয়ে থাকেন। তাদের কারণে রাস্তায় বেশি সমস্যায় পড়েন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক, যুবক এবং প্রাপ্তবয়স্ক চালকদের অধিকাংশ মোটরসাইকেলই লাইন্সেসবিহীন বলে জানিয়েছেন একটি মহল। তাদের প্রয়োজনীয় কোনো কাগজপত্র নেই। এভাবে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জন্য অসচেতন অভিভাবকদেরই দায়ী করছেন সচেতন মহল।
এসব অবৈধ মোটরসাইকেল চালিয়ে তারা নির্জন স্থানে গিয়ে মাদকসেবন, চুরি ও ছিনতাইসহ নানা অসামাজিক, অনৈতিক অপরাধমূলক কাজ করে থাকেন তারা।
বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে দিন দিন দুর্ঘটনা বাড়ছে গত কয়েকদিনে উপজেলায় মোটরসাইকেল আরোহী সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকজন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং মাঝেমাঝে মৃত্যুর সংবাদও পাওয়া যায়। এদিকে প্রতিদিনই হাসপাতালে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার কোনো না কোনো মোটরসাইকেল আরোহীর গুরুতর আহত হওয়ার খবর জানা যায়।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা গবেষকেদের মতে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাগুলো মূলত ঘটে বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিংয়ের চেষ্টা, বারবার প্বার্শ পরিবর্তন, সঠিক আইন না মানা ও চলন্ত অবস্থায় মুঠোফোনে কথা বলা। হেলমেট ব্যবহার না করা ও নিম্নমানের হেলমেটের কারণেও দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়াও পাহাড়ি আঁকাবাকা উঁচু নিচু রাস্তায় গাড়ি চালাতে অনভিজ্ঞ ও অসচেতনতার কারণেই ঘটছে এমন সব দুর্ঘটনা। তবে এবিষয়ে এখনি কোনো যথাযথ আইনী পদক্ষেপ না নিলে উপজেলাবাসীর জন্য রয়ে যাবে অশনিসংকেত!
সূত্র বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে যাওয়া প্রায় ৩৫ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। এর মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক বা অল্প বয়সী তরুণদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। তবে সম্প্রতি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। তাই এ সকল তরুণদের বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানো রোধ করতে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের অর্থদণ্ড দিলে এসব যুবকরা কিছুটা সতর্ক হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
লংগদু মোটরসাইকেল চালক সমিতির সভাপতি মো. হানিফ বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সমিতির অন্তর্ভুক্ত চালকদের ড্রাইভিং ও গাড়ির লাইসেন্স করানো। পাশাপাশি নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে রাস্তায় গাড়ি চালানোর জন্য সমিতি কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে সভায় তাদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। সমিতিতে নতুন করে কোনো সদস্য নেয়া হচ্ছে না এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য জরুরি সভা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে লংগদু থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ইকবাল উদ্দিন জানান, বিট পুলিশিং ও জনসচেতনতামূলক সভা করে আমরা প্রায়ই তাদের বেপরোয়া গতি, হেলমেট পরিধান, লাইসেন্স সংক্রান্ত এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের গাড়ি চালানোর বিষয়ে সচেতনতা, সর্তকতা ও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকি। তবুও সংশোধন না হলে পরবর্তীতে এদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এতো এতো মোটরসাইকেল-অটোরিক্সা সড়ক দুর্ঘটনার পরেও বিভিন্ন সময় উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সচেতন নাগরিক ও সংবাদকর্মীরা এসব অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করলেও অজানা কারণে তার কোনো বাস্তবিক প্রতিফলন দৃশ্যমান হয়নি। ফলশ্রুতিতে হতভম্ব সুশীল সমাজ!
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।