রাঙামাটির লংগদু উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বুলবুল আহম্মদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অফিসে না আসার অভিযোগ উঠেছে। আর এতে প্রতিনিয়ত সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয় জনগণ। যা তাদের শ্রম ও অর্থ দুই দিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এছাড়া বিভিন্ন কাজের জন্য আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ২৮ মার্চ লংগদু উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মো. বুলবুল আহম্মদ। যোগদানের শুরু থেকে কার্যালয়ে টানা অনুপস্থিতি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে সেবা গ্রহীতারা সঠিক সময়ে সেবা না পেয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এই বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে পড়তে হচ্ছে বেকায়দায়।
এই কর্মকর্তা না এসে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও অফিস স্টাফ দিয়ে কোনমতে কাজ চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি (সিটিজেন চার্টার) সম্পর্কে না জানায় প্রতিনিয়ত সেবা গ্রহীতাদের কর্মকর্তা নেই, ছুটিতে আছে, পরে আসার অজুহাত দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। যার ফলে জনগুরুত্বপূর্ণ জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) সংগ্রহ, সংশোধন ও হারানো জাতীয় পরিচয় পত্র ফেরত পেতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এছাড়াও সাধারণ জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে অসদাচরণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
সরজমিনে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গেলে দেখা মেলে ২ জন কর্মচারীর। কর্মকর্তা কর্মস্থলে অনুপস্থিত। সরকার কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে দপ্তরে কী কী সেবা প্রদান করা হয় তার তথ্য সম্বলিত সিটিজেন চার্টার বাহিরে দেয়া থাকার বিধান থাকলেও নির্বাচন কার্যালয়ে মেলেনি এর কোনো অস্তিত্ব।
সাধারণ মানুষের অভিযোগের বিষয়ে অফিসে কর্মরত এক স্টাফ বলেন, আমাদের কর্মকর্তা প্রায় সময়ই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তার কাছে বিগত নির্বাচন, সেবা গ্রহীতাদের (এনআইডির নতুন ও সংশোধন) আবেদনসহ বিভিন্ন তালিকা চাইলে তিনি বলেন, ওগুলো রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে থাকে, আমাদের কাছে থাকে না।
কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা উপজেলার ভাসান্যাদম ইউনিয়নের চাইল্যাতলী এলাকার বাসিন্দা তারেক সরদার বলেন, বিশেষ প্রয়োজনে আমার পরিবারের তিনজনের এনআইডির অনলাইন কপি নির্বাচন অফিস থেকে তুলতে গেলে নির্বাচন কর্মকর্তা সরাসরি টাকা দিতে হবে বলে দাবি করেন। কতটা জিজ্ঞেস করলে, ৩টির জন্য সাতশত টাকার কথা বলেন। এসময় একজন সাংবাদিক তার কাজে অফিসে আসলে টাকা না নিয়ে দ্রুত চলে যেতে বলেন।
ভুক্তভোগী মো. সুরুজ ও সোহাগ বলেন, এনআইডি কার্ডের সংশোধনীর জন্য এবং দেশের বাহিরে যাবো তাই নতুন এনআইডির জন্য আবেদন করেছি। একেক সময় একেক সমস্যা দেখায়। কখনও কর্মকর্তা নেই, কখনও কাজের ব্যস্ততায় পরে আসতে বলা হয়। এক সপ্তাহ পর ছবি তোলার কথা থাকলেও ২-৩ মাস অতিবাহিত হয়েছে ছবি তোলার জন্য কোনো বার্তা পাইনি।
তারা আরও বলেন, মাসের পর মাস নির্বাচন কর্মকর্তার অফিসে চক্কর কাটছি, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। একটা সামান্য কাজের জন্য আমার অবস্থা একেবারে কাহিল। শুনেছি টাকার বিনিময়ে দ্রুত কাজ করে দেয়া হয়।
মাইনীমূখ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল বলেন, আমার ইউনিয়নের একজনের এনআইডি সমস্যা নিয়ে পরপর দুইদিন নির্বাচন অফিসে গিয়েছি। কিন্তু নির্বাচন কর্মকর্তাকে পাইনি। ফলে কাজটা করতে সময় লেগেছে। সরকারি কর্মকর্তা যদি এভাবে অনিয়মিত থাকে তাহলে আমাদের এ দুর্গম পাহাড়ের মানুষের কষ্ট-ভোগান্তি লেগেই থাকবে।
জিানতে চাইলে লংগদু উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বুলবুল আহম্মদ বলেন, সিটিজেন চার্টার লাগানোর প্রক্রিয়া খুব তাড়াতাড়ি শুরু হবে।
জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে নাগরিক ভোগান্তির বিষয়টি তিনি পুরোপুরি এড়িয়ে যান এবং আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, এসব মিথ্যা, বানোয়াট।
বিভিন্ন আবেদনের তালিকা চাইলে তিনি বলেন, ওগুলো সব জেলা অফিসে, আমাদের কাছে কোনো ডকুমেন্টস সংগ্রহে নেই। নিতে হলে আবেদন করতে হবে।
জানতে চাইলে সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মো. মনির হোসেন বলেন, অসুস্থতার কারণে তিনি ছুটিতে ছিলেন এজন্য কিছুদিন অফিস করতে পারেননি। আর্থিক লেনদেন, অসৌজন্যমূলক আচরণ এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।