অবৈধ অটোরিক্সার মাসোয়ারার মাশুল গুনতে হয় যাত্রীদের, যানজটেও নাকাল

সিএনজিচালিত অটোরিকশার কোনো নিবন্ধন নেই। শুধু পেছনে লেখা রয়েছে আবেদিত বা অনটেস্ট। আর এই আবেদিত লেখা দিয়েই চলছে বছরের পর বছর। এতে লাভবান হচ্ছেন কিছু অনিবন্ধিত সংগঠনের শ্রমিক নেতা, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা এবং ট্রাফিক পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।

মাসোয়ারা টোকেন বা মাস শেষে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মহাসড়কে এগুলো চলার বৈধতা দিয়েছেন তারা। এসব যান চলাচলে চালকদেরও নেই কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স। সমিতির সদস্য হলেই গাড়ি চালানো যায়। আর এসব অটোরিক্সার স্ট্যান্ড না থাকায় যত্রতত্র পার্কিং করায় আনোয়ারা চৌমুহনী চাতরী এলাকায় যানজটে নিত্য ভোগান্তিতে পড়েন সবাই। তার ওপর ঈদে ঘর মুখি মানুষের ভোগান্তিও সীমাহীন। আনোয়ারা, বাঁশখালী, পেকুয়া, কুতুবদিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করেই চট্টগ্রাম যাতায়াত করেন।

সমিতি, নেতা, পুলিশকে দেওয়া মাসোয়ারার টাকার কয়েকগুন তারা তুলে নেয় যাত্রীদের থেকে। প্রতি বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত অটোরিকশা সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে যাত্রীদের কাছ থেকে। এই ভাবে চলছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার এসব গাড়ি।

তবে গাড়ি গুলোকে আটক করে ট্রাফিক পুলিশ মামলা দিলেও ছাড়িয়ে নিতে সংগঠনের নেতাসহ দলীয় নেতাদের তকবীরের মুখে পড়েন পুলিশ।

অভিনব কৌশলে কর্ণফুলী অটোরিকশা শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের টোকেনে বেশ কয়েকটি অনিবন্ধিত সংগঠনের অবৈধ অটোরিকশা রয়েছে হাজারখানেক। প্রতিটি অটোরিকশা থেকে প্রতি মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে আদায় করেন অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। ওই টোকেনে চলা যায় এক মাস। প্রতি মাসে টোকেন না নিলে সমস্যায় পড়তে হয় চালকদের।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের ছত্রছায়ায় চলছে এসব অবৈধ অটোরিকশা। সমিতির নেতা ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজশে এসব অবৈধ অটোরিকশা চলছে সড়কে। অবৈধ অটোরিকশাকে ‘বৈধতা’র বিনিময়ে তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। অবৈধ অটোরিকশার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আনোয়ারা উপজেলায় একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের নেতারা চালকদের কাছ থেকে নেন টাকা।

চালকরা জানান, কর্ণফুলী অটোরিকশা শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ লেখা টোকেন দিয়েই বছরের পর বছর চলছে এখানকার অবৈধ অটোরিকশাগুলো। নিবন্ধনহীন সহস্রাধিক অটোরিকশা বাবদ প্রতি মাসে উত্তোলন করা হয় প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা। উত্তোলিত টাকার ভাগ পান সমিতির নেতা, ট্রাফিক পুলিশ থেকে শুরু করে প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা।

প্রতিমাসে টোকেনের ধরণ পাল্টে ফেলা হয়, যাতে করে কেউ ধরতে না পারে। আনোয়ারার চাতরী চৌমুহনীতে মোহাম্মদ আলম, আনছার, জাবেদ, মোতাহেরসহ টোকেন ব্যবসায় রয়েছে বেশ কয়েকজন। আর বটতলী, সেন্টার ফেরীঘাটে নুরুনবীর নিয়ন্ত্রণে। এসব টোকেন কর্ণফুলীর ইউসুফ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে নেন তারা। টোকেন প্রতি ১০ টাকা করে কমিশনও দিতে হয় চালকদের।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক সিএনজি অটোরিকশা চালকরা জানান, দক্ষিণ চট্টগ্রামের কয়েক হাজার গাড়ি রয়েছে। হাতে গোনা কিছু গাড়ির কাগজপত্র থাকলেও অধিকাংশের কোনো কাগজপত্র নেই। তাই যাদের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই, তারা সংগঠনের টোকেন দিয়ে সড়কে গাড়ি চালান৷
টোকেন না থাকলে প্রতিটি মোড়ে পুলিশের হয়রানী আর মামলা তো আছে। আগে একটি টোকেনে আনোয়ারা থেকে মইজ্জারটেক এলাকায় পর্যন্ত যাওয়া যেত। এখন আনোয়ারা চালাতে গেলে ৫০০ টাকার টোকেন আর ক্রসিংয়ের দিকে গেলে ৩০০ টাকার টোকেন। এক কথায়- যে এলাকায় যায়, সে এলাকার আলাদা টোকেন নিয়ে যেতে হয়।

এবিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারার ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা প্রায়ই রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশা ধরতে অভিযান চালাই। তবে টোকেন দিয়ে অবৈধ অটোরিকশা চালানোর বিষয়টি আমার জানা নেই।

স্থানীয় চাতরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোহেল জানান, আমার ইউনিয়নের চাতরী চৌমুহনী বাজারের ফুটপাত দখলে রেখে গাড়ির স্টেশন ও চাঁদাবাজি এবং সিএনজি অটোরিকশায় টোকেন বানিজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। কোনো অপরাধীর ঠাঁয় হবেনা চাতরীতে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।