আইনের শাসন বাস্তবায়নে সব বিভাগের সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে— সিএমএম রবিউল আলম

চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মো. রবিউল আলম বলেছেন, ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় বিচার প্রশাসন, নির্বাহী প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ একে অপরের পরিপূরক। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তরিকতা ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে একযোগে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে বিচার প্রার্থী মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কারও অবহেলা কাম্য নয়। নারীর অধিকার, কারাবন্দিদের অধিকার সর্বোপরি মানবাধিকার সমুন্নত রেখে বিচারপ্রার্থী জনগণের কাঙ্খিত ন্যায় বিচার দ্রুততম সময়ে নিশ্চিতকরণ ও আইনের শাসন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

শনিবার (১২ মার্চ) সকাল ১০টায় সিএমএম আদালতের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সে সভাপতির বক্তব্যে সিএমএম মো. রবিউল আলম এসব বলেন। সিএমএম আদালতের উদ্যোগে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।

কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল হালিম, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) বেগম তাহমিনা আফরোজ চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) বেগম মনীষা মহাজন, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম মেহনাজ রহমান এবং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহান।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এ এইচএম জিয়া উদ্দিন। পুলিশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এডিসি (প্রসিকিউশন) মো. কামরুল হাসান, এডিসি (ক্রাইম) মো. জহিরুল ইসলামসহ সিএমপির সকল থানার ওসি।

কনফারেন্সে পিবিআইয়ের (চট্টমেট্রো) পক্ষে এডিশনাল এসপি মো. জুনায়েত কাউছার, র‌্যাব-৭ এর পক্ষে এডিশনাল এসপি মো. আবুল খায়ের ফকির এবং সিআইডির পক্ষে সহকারী পরিচালক আব্দুছ ছালাম মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

কনফারেন্সে আরো উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান, চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবদুল মন্নান, ফরেনসিক মেডিসিনের প্রভাষক ডা. এস কে ধর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (মেট্রো) সহকারী পরিচালক মোমেন মন্ডল এবং প্রবেশন অফিসার বেগম পারুমা বেগম।

কনফারেন্সের শুরুতে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলম বিগত সভার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরে চট্টগ্রাম সিএমএম আদালতে বিচারাধীন মামলাসমূহের সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

সিএমএম তাঁর বক্তব্য বলেন, ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৬১ ধারা মোতাবেক যাতায়াতের সময় বাদ দিয়ে সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। জালিয়াতির মামলাগুলোতে দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪৬৩ এবং ৪৬৪ ধারার উপাদান আকৃষ্ট করে কিনা তা সঠিকভাবে দেখতে হবে। মানবদেহে আঘাত সংক্রান্ত অপরাধসমূহে মূল ভিকটিমকে যাতে সাক্ষী করা হয়, সঠিক ধারায় যেন মামলা লিপিবদ্ধ করা হয় এবং বিভিন্ন পরোয়ানা জারির ক্ষেত্রে আরও তৎপর হওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন থানা থেকে আগত ওসিদের নির্দেশনা প্রদান করেন।

চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্রুততা ও দক্ষতার সাথে আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল, যথাসময়ে মামলার সাক্ষী উপস্থাপন নিশ্চিত করে তাদের নিরাপত্তা বিধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে কার্যকর ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানান।

আইনের শাসন বাস্তবায়নে সব বিভাগের সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে— সিএমএম রবিউল আলম 1

কনফারেন্সে উপস্থিত ম্যাজিস্ট্রেটগণ মামলার সাথে জব্দতালিকা প্রেরণ, খসড়া মানচিত্রে ঘটনাস্থল সুনির্দিষ্টকরণ, সাক্ষীর ১৬১ ধারার জবানবন্দি লিপিবদ্ধের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন, সাক্ষীর ওয়ারেন্টের প্রতিবেদন প্রেরণের উপর জোর দেন। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেটগণ যথাসময়ে সাক্ষী উপস্থাপনে পুলিশ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সাক্ষীর উপস্থিতি পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং মামলা নিষ্পত্তির হার বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষতঃ পুরাতন মামলা অধিক হারে নিষ্পত্তি হওয়ার সন্তোষ প্রকাশ করেন।

এছাড়াও বক্তাগণ দ্রুত গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল ও সমন জারীর ব্যবস্থা গ্রহণ, তদন্ত কাজে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান, তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার, হয়রানী বন্ধ, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট ও ডাক্তারি সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন, নকলখানা হতে স্বল্পতম সময়ে নকল সরবরাহের ব্যবস্থা করা, মামলার আলামত সংরক্ষণ ও সঠিক নিয়মে নিষ্পত্তি, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও নিষ্পত্তিকৃত নথি দ্রুত রেকর্ডরুমে প্রেরণ, আদালত ও বিচার সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সহ নানাবিধ বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামতসমূহ কনফারেন্সে তুলে ধরেন।

গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগপত্র দেয়ার আগে পাবলিক প্রসিকিউটরের মতামত নেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেন বিজ্ঞ মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর। সঠিক ধারায় মামলা রুজু এবং তদন্তের ক্ষেত্রে আরো যত্নবান হওয়ার জন্য বলেন আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

বিভিন্ন থানা থেকে আগত থানার ওসিসহ অন্যান্য উপস্থিতি কর্র্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যার আইনী সমাধান, প্রশ্নোত্তর প্রদান এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করে সমাপনী বক্তব্যে সিএমএম মো. রবিউল আলম বলেন যে, যে সকল আসামির পূর্বের মামলা নেই এবং কোন গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত নয় তাদের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটগণকে দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডারস এ্যাক্ট, ১৯৬০ এর বিধানাবলী অনুসরণ করতে হবে।

কনফারেন্সে আগত সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে পারষ্পারিক তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে ও বিদ্যমান সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করলে কাজের মুল্যায়ন হয় এবং পারষ্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। সামনের দিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর পারষ্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় আরো গতিশীলতা আসবে বেলে আশাবাদ ব্যক্ত করে আগত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষণা করেন সিএমএম মো. রবিউল আলম।

এফএম

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।