আনোয়ারায় এখনও জমেনি ঈদ বাজার

ঈদের কেনাকাটা এখনো পুরোপুরি জমেনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায়। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, বিপণিবিতানে ক্রেতাদের আনাগোনা ততই বাড়ছে। তবে গতবারের চেয়ে এবার বেশি দামেই ঈদ পোশাক কিনতে হবে ক্রেতাদের। কারণ হিসেবে ঢাকায় বঙ্গবাজারে আগুন আর দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির কারণে প্রভাবটা কাপড়ের ওপর পড়েছে বলে দাবী ব্যবসায়ীদের।

উপজেলার বিভিন্ন শপিং মলে ঘুরে দেখা গেছে, গত শুক্র ও শনিবার রাতে শপিংমল গুলোতে মোটামুটি ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও বেচাবিক্রি হয়েছে অনেকটায় কম। আগামী সপ্তাহ থেকে ঈদের কেনাকাটা পুরোপুরি জমে উঠবে এমনটায় আশা ব্যবসায়ীদের। এ বছর মেয়েদের জন্য বাজারে এসেছে ‘সোনিয়া ও নিহারা’ নামে ভিন্ন পোষাক।

বটতলী রুস্তমহাট জামাল শপিং কমপ্লক্সের নকশি ফ্যাশনের মালিক খোরশেদ আলম বলেন, ক্রেতাদের ভিড় দিনদিন বাড়ছে। তবে এ বছর কাপড়ের দাম একটু বেশি। প্রতি দিন গড়ে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মেয়েদের সোনিয়া, নিহারা, লেহেঙ্গার চাহিদা এবার বেশি। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকে পুরো জমে উঠবে ঈদ বাজার।

ব্যবসায় লাভের আশায় করোনার পর থেকেই বেশি বিক্রির দিকে মনোযোগী হন কাপড় ব্যবসায়ীরা। অনেক বেশি পণ্য কিনে রাখেন দোকানে ঈদে বিক্রির জন্য। বিশেষ করে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে এ চিত্র দেখা যায় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন শপিং মলে। তবে এবার বাজারে ক্রেতা খুব কম বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, পোশাকের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়, সরঞ্জামের দাম ও শ্রমিকের মজুরি সবকিছুই বেড়েছে। বিদ্যুতের দামও বেড়ে যাওয়ায় বিক্রয়কেন্দ্রের খরচও বেড়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে পোশাকের দামও বেড়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানভেদে দাম বেড়েছে ভিন্ন ভিন্ন।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, ঈদকে সামনে রেখে আনোয়ারার ঈদ বাজার গুলোতে স্থানীয় লোকজন ছাড়াও কর্ণফুলী, বাঁশখালি ও চন্দনাইশ উপজেলা থেকেও আসছেন ক্রেতারা। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের কথা মাথায় রেখেই উপজেলার শপিংমল গুলোতে এবারের ঈদের বিভিন্ন ধরনের পোষাক তুলেছেন তারা। মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের সংখ্যা বেশি থাকায় তাদের চাহিদাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে থ্রি-পিস ৬০০ থেকে সাড়ে ৩ হাজার, শাড়ি ৫০০ থেকে সাড়ে ৩ হাজার, লেহেঙ্গা ২ হাজার থেকে ৫ হাজার, শার্ট ৫০০ থেকে দেড় হাজার, পাঞ্জাবি ৬০০ থেকে ২ হাজার, প্যান্ট ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা, শিশুদের জামাও পাওয়া যাচ্ছে কম দামে। তরুণীদের জন্য আসছে ‘সোনিয়া ও নিহারা’ যা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়।

তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, পণ্যের প্রাইজ ট্যাগের ওপর নতুন প্রাইজ ট্যাগ দিয়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে বাড়তি মূল্যও নিচ্ছেন অনেক দোকানী। দামও এবার অনেকটা বাড়তি। বিভিন্ন শপিংমলে প্রশাসনের নজরদারীরও আহবান জানান ক্রেতারা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রোজার শুরু থেকে বেচাবিক্রি ভালো না হলেও এখন অনেক ভালো হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে পুরোদমে বিক্রি বাড়বে বলে প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের। তবে অনেক অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের প্রাইজ ট্যাগের ওপর নতুন প্রাইজ ট্যাগ দিয়ে বাড়তি মূল্যও নেয়ার চেষ্টাও করছেন। প্রশাসনের নজরদারী থাকলে সকলের জন্য সুবিধা হয়।

পরিবারের সাথে শপিং করতে আসা উম্মে সাফিয়া ইকরা নামে এক শিশু জানায়, ভারতীয় কাপড়ের ডিজাইন ও রং ভাল লাগলেও দাম কিছুটা বেশি। তাই দেশি সুতি থ্রি-পিছ নিয়েছি।

ঈদ বাজারে যেন শপিং মল গুলোতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা বা সড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা না ঘটে দিকে বাড়তি নজরদারীতে রয়েছে বলে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর্জা মুহাম্মদ হাছান ও কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ জানান, আমরা জনগণের জান-মাল রক্ষার জন্য সব সময় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার বিভিন্ন বিপণি-বিতান দোকান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ সবসময় টহল দিচ্ছে। যানজট নিরসনেও বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করছে পুলিশ।

এদিকে পুরো রমজান মাস জুড়ে ভ্রাম্যমান আদালত মাঠে রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আবদুল্লাহ্ আল মুমিন। তিনি বলেন, বিভিন্ন শপিংমলে উপজেলা প্রশাসন নজরদারীতে রয়েছে। যাতে পণ্যের প্রাইজ ট্যাগের ওপর নতুন প্রাইজ ট্যাগ দিয়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে বাড়তি মূল্য নিতে না পারে। এমন অভিযোগ পেলে তাদের ভ্রাম্যমান আদালতে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।