চট্টগ্রামের আনোয়ারায় দ্বিতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে প্রণব কুমার ভট্টাচার্য (৫৫) নামে এক সহকারী শিক্ষককে মারধর ও জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে দিয়েছেন ভিকটিমের স্বজন ও ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী। সোমবার (২০ মে) দুপুরে উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের ডুমুরিয়া-রুদুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় সোমবার (২০ মে) দুপুরে আনোয়ারা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছে ভিকটিম শিক্ষার্থীর মা। আটককৃত সহকারী শিক্ষক প্রণব কুমার ভট্টচার্য্য পাশ্ববর্তী পরৈকোড়া ইউনিয়নের পাঠানীকোটা এলাকার মৃত অধীর ভট্টাচার্য্যরে পুত্র। ২০০২ সালে ডুমুরিয়া-রুদুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
বিদ্যালয় ও ভিকটিমের স্বজনরা জানান, গত মঙ্গলবার (১৪ মে) উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের ডুমুরিয়া-রুদুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর ৮ বছরের এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠে আটক শিক্ষককের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পরদিন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে ভুক্তভোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা বিদ্যালয়ে গিয়ে ওই শিক্ষককে মারধর করেন এবং জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে তুলে দেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা জানান, “ঘটনার ৫ দিন পার হলেও লোক-লজ্জায় অফিসের মাধ্যমে সমাধান করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় ঘটনাটি সমাজের লোকজনকে জানিয়েছি। ঘটনার পরদিন থেকে আমার মেয়ে আর স্কুলে যাচ্ছে না। সে এখনও অসুস্থ এবং ভয়ের মধ্যে আছে।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জিয়া উদ্দিন বলেন, “ওই শিক্ষক পূর্বেও এ ধরণের একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছে বিদ্যালয়ে। গত মঙ্গলবারের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগীর মা। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে এলাকার সমাজের মান্যগণ্য ব্যক্তিসহ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে পুরো এলাকাবাসী। এলাকার লোকজন তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় এবং ভুক্তভোগীর মা বাদি হয়ে থানায়ও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মিতা দে বলেন, “ঘটনার দিন আমি জেলার মিটিং ছিলাম। ছাত্রীর অভিভাবকরা লিখিতভাবে বিষয়টি শিক্ষা অফিসে জানিয়েছেন। আমরা মনে করেছিলাম বিষয়টি নিয়ে আমাদেরকে ডাকা হবে। কিন্তু ডাকার আগেই আজ অভিভাবকসহ এলাকার লোকজন স্কুলে এসে সকলের সামনে শিক্ষককে মারধর ও লাঞ্ছিত করে। সত্যি দুঃখজনক ঘটনা এটি আমাদের জন্য।”
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জহির খান মুজিব বলেন, ছাত্রীর অভিভাবক আমাদের কিছু না জানিয়ে আজ এ ঘটনা ঘটাল, পরে জানলাম তারা নাকি শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দিয়েছে।
তবে ঘটনার পরপরই বিদ্যালয়ের পরিদর্শনে যান উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রঞ্জন ভট্টাচার্য্য। এ সময় তিনি বলেন, “ঘটনাটি তদন্ত করতে অফিস থেকে আমাদের পাঠিয়েছেন। আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পরিচালনা পরিষদের সাথে কথা বলে তাদের স্ট্যাটম্যান্ট নিয়েছি।”
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল আহমদ বলেন, “প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে এক শিক্ষক আটক রয়েছে। থানায় অভিযোগ হয়েছে এবং পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।