আনোয়ারায় সাগর তীরে শুঁটকি তৈরির মহাকর্মযজ্ঞ

কর্ণফুলী নদীর মোহনায় বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা সৈকতের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুঁটকি তৈরির জন্য সবচেয়ে উপযোগী আবহাওয়ায় কর্মব্যস্ত হয়ে ওঠেছে উপকূলীয় শুঁটকি পল্লীগুলো। রাসায়নিক মুক্ত হওয়ায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রয়েছে এসব শুঁটকির দারুণ কদর।

বিষমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন শুঁটকি পল্লীকে ঘিরে গ্রামের দরিদ্র মহিলা, বৃদ্ধ ও শিশুরা এখানে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। সংসারের কাজের পাশাপাশি বাড়তি টাকা আয় করছেন তারা। সামুদ্রিক মাছের প্রাপ্তি সহজলভ্য হওয়ায় শুঁটকি তৈরিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে এ এলাকার অসংখ্য মানুষ। মাছ আহরণ থেকে শুরু করে শুঁটকি বাজারজাতকরণ পর্যন্ত চলে শ্রমিকদের কর্মযজ্ঞ।

সরজমিনে দেখা গেছে, গহিরা সৈকত থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। সাগর থেকে আনা হয় রূপচাঁদা, ইলিশ, চিংড়ি, ছুরি, কুরাল, সুরমা, লইট্ট্যা, পোপাসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছ। এগুলো কোনো প্রকার ফরমালিন ও রাসায়নিক পদার্থের প্রয়োগ ছাড়াই চার থেকে ১২ দিন রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় হরেক রকমের শুঁটকি। এখানে শুঁটকি উৎপাদনে স্থায়ী পল্লী নেই। তবুও কয়েক যুগ বছর ধরে চলছে সফল ব্যবসা। অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পেশাটি মৌসুমি ব্যবসানির্ভর।

চকরিয়া থেকে আসা শুঁটকি শুকানো কাজে নিয়োজিত মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়ায় বিদেশেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। কোনো ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হচ্ছে এসব শুঁটকি। সমুদ্রের তীরবর্তী হওয়ায় এখানে রোদের প্রচণ্ড তাপ রয়েছে। সৈকতে আসা অনেক লোক তাদের আত্মীয়স্বজনের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন শুঁটকি।

আনোয়ারায় সাগর তীরে শুঁটকি তৈরির মহাকর্মযজ্ঞ 1

আনোয়ারা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা ম. রাশেদুল হক বলেন, তালিকাভুক্ত ২০টি মহল উপকূলের বিভিন্ন স্থানে শুঁটকি উৎপাদনে কাজ করছেন। বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনের ক্ষেত্রে আজ সোমবার সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়। শুঁটকির ব্যবসায় বিভিন্নভাবে কয়েক শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয় এ পল্লীতে। এই শুঁটকি পাইকারী ব্যবসায়ীরা দেশ বিদেশেও নিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, ডিডিটি পাউডার বা কীটনাশক না মেশালে শুঁটকির প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায়। এছাড়াও মানসম্মত শুঁটকি বিদেশে রফতানির বিষয়ে কাজ করছে মৎস্য বিভাগ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।