চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বন্যহাতির আক্রমণে নিহত বৃদ্ধের স্বজনদের পাশে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন। বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) দুপুরে হাতির আক্রমণে নিহতের স্বজনদের দেখতে যান ইউএনও।
এরপর হাইলধর ইউনিয়নের পীরখাইন এলাকায় পানিতে ডুবে নিহত দুই শিশুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন এবং সমবেদনা জানিয়ে আর্থিক সহযোগিতা করেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, কোনো সহায়তাই এই অপূরণীয় ক্ষতিগুলোর জন্য যথেষ্ট নয়। তারপরও প্রত্যেকটি পরিবারকে সরকারি আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। শিশুদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সকলকে আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
এর আগে, গত বুধবার (৫ জুলাই) রাতে উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও গ্রামে বন্যহাতির আক্রমণে মারা যান ছাবের আহমেদ (৭০)। তিনি একই এলাকার মৃত আতর আলীর পুত্র।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, বৃদ্ধ লোকটি মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় হাতির সামনে পড়লে হাতিটি তাকে শুঁড় দিয়ে ওপরে তুলে আছাড় দেয়। স্থানীয়দের সহযোগিতার উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। বন্য হাতিটি বাঁশখালী থেকে বিলের মাঝদিয়ে দেয়াঙ পাহাড়ের দিচ্ছি যাচ্ছিল।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে হাতির আক্রমণের শিকার এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে এনেছিল। কিন্তু তার আগেই ওই বৃদ্ধের মৃত্যু ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেয়াঙ পাহাড় ও আশপাশের এলাকায় ১২ বছর ধরে চলছে বন্য হাতির আতঙ্ক । চুনতি অভয়ারন্য থেকে বাঁশখালীর পাহাড়ি এলাকা হয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও আনোয়ারায় ঢুকে কিছুদিন পরপরই তান্ডব চালায় বন্য হাতির দল। ২০১০ সালের পর থেকে ১২ বছরে হাতির আক্রমনে কর্ণফুলী ও আনোযারায় অন্তত ১৮ জন মারা যাওয়া ছাড়াও ৫০-৭০ জন হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
কেইপিজেডের পাহাড়ে অবস্থান করা হাতির তান্ডবে পাহাড়ের আশপাশে দুই উপজেলার মানুষের মাঝে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে এলাকাবাসী। পথ হারিয়ে বন্য হাতির পাল হানা দিলেও এবারই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে হাতি গুলো দেয়াঙ পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে সম্প্রতি দেয়াঙ পাহাড়সহ আশপাশের এলাকা গুলোতে যেভাবে পাহাড়-টিলা কাটার প্রতিযোগিতা চলছে, শুধু হাতি না পাহাড়ে থাকা বন্যপ্রাণীরাও লোকালয়ে চলে আসবে।
তবে হাতিগুলো তাড়াতে আধুনিক কোন প্রযুক্তি না থাকায় বনবিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছেন হাতি তাড়াতে। হাতি তাড়ানোর কোন সুযোগ নেই জানিয়ে বন বিভাগের বাঁশখালী জলদী অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান বলেন, ক্ষতিগ্রস্তরা আবেদন করলে তাদের তদন্তপূর্বক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন হাতির আক্রমণে আনোয়ারার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি বনবিভাগ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।