চট্টগ্রামের আনোয়ারায় নিখোঁজের ১৬ দিন পর চার বছর বয়সী মো. ওমর ছিদ্দিক আলম নামে এক শিশুর সন্ধান মিলেছে। রোববার (৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের আনোয়ারার চাতরী চৌমুহনী বাজারে এক মাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সন্তানকে ফিরে পান মা বেবি আকতার।
ওমর বাঁশখালীর চাম্বল ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সালেহ্ আহমেদ বাড়ির মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে ওমর ছিদ্দিক সবার ছোট। সে হেফজখানায় পড়াশোনা করতো।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ নভেম্বর রাতে মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হয় শিশু ওমর। এরপর শিশুটির খোঁজ মিলছিলো না। সন্তানের সন্ধান পেতে পাগলের মতই ঘুরেছেন বিধবা মা। ছেলের সন্ধান পেতে গিয়েছেন পীর, ফকিরের দরবারেও। নিখোঁজের পর বাঁশখালী দিয়ে মাছ ক্রয়ের জন্য যাওয়ার পথে মোহাম্মদ মফিজ নামে ভোলা জেলার এক মাছ ব্যবসায়ী ওমরকে খুঁজে পান। গভীর রাতে শিশুটিকে সড়কের ধারে পেয়েছেন বলে জানান তিনি। অবশেষে গতকাল রোববার স্থানীয় এক মাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ওমরকে ফিরিয়ে নেন মা।
হারানো শিশুকে খুঁজে পেয়ে মা বেবি আকতার বলেন, দুই বছর আগে স্বামী মারা যায়। তিনটা ছেলে সন্তান নিয়ে অভাবের সংসারের ছেলেকে মাদ্রাসায় দিয়ে ছিলাম লেখাপড়া করানোর জন্য। সারাদিন ছেলে মাদ্রাসায় থাকে আর আমি মানুষের বাড়িতে কাজ শেষে নিয়ে আসি। গত ১৯ নভেম্বর রাতে সে মাদ্রাসায় ঘুমিয়ে গেলে আমি বাড়ি চলে আসি। ঔইরাতে মাদ্রাসা থেকে আমার বাচ্চা নিখোঁজ। এরপর থেকে পাগলের মত বিভিন্ন স্থানে খুঁজেছি। ছেলের সন্ধান পেতে পীর, ফকিরের দরবারেও গিয়েছি। কিন্তু কোনো সন্ধান পাইনি।
তিনি আরও বলেন, সবশেষ ছেলেধরারা নিয়ে গেছে মনে করে থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও করেছি। মনে হয়েছিলো কেউ লুকিয়ে রেখেছে। অবশেষে রোববার রাত ৯টায় আনোয়ারার সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সহায়তায় আমার বুকের ধনকে ফিরে ফেলাম। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সকলকে।
মাছ ব্যবসায়ী মফিজ বলেন, বাঁশখালী সড়ক দিয়ে মাছের জন্য কক্সবাজারের পেকুয়া যাওয়ার পথে রাত ৩টার দিকে সড়কে শিশুটিকে দেখি। গাড়ি থামিয়ে দেখি আশেপাশে কেউ নেই। আর কোনো উপায় না দেখে গভীর রাতে শিশুটিকে নিয়ে ফিরে আসি আনোয়ারায়। এরপর থেকে বিভিন্ন মানুষ এ শিশুকে টাকার বিনিময়ে কিনতেও চান। আমি কৌশলে নিজের সন্তান বলি এবং এক আত্মীয়র বাড়িতে রেখে লালন পালন করি, খুঁজতে থাকি তার স্বজনদের।
স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী আলী হায়দার মোহাম্মদ দিদার বলেন, বাজারের মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দুইজন লোকের তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে তারা আমার দোকানে চলে আসে। তারা জানায়, মফিজ নামে এক মাছ ব্যবসায়ীর কাছে একটি শিশু রয়েছে। কিন্তু সে বিষয়টি জানাচ্ছে না। এ সময় আমি স্থানীয় সাংবাদিকদের বিষয়টি জানানোর পর তারা প্রশাসনের সহায়তায় শিশুটির প্রকৃত স্বজনদের সন্ধান বের করেন।
সাংবাদিক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শিশুটিকে পাওয়া মাছ ব্যবসায়ী মফিজ আমাদের জানিয়েছে শিশুটি সে বাঁশখালীর সড়কের ধারে পেয়েছে। আর এক আত্মীয় বাড়িতে রেখেছেন লালন পালনের জন্য। এরপর আমি আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন ও বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন আকতার, বাঁশখালীর স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় নিখোঁজ শিশুর পরিবারের সন্ধায় বের করার চেষ্টা করি। প্রায় এক ঘন্টা চেষ্টার পর শিশুটির মা’সহ স্বজনদের খোঁজ পেয়ে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঙ্গে কথা বলে শিশুটিকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, শিশুটি পাওয়ার পর মফিজ নামে এই ব্যক্তি কেন তার কাছে রেখেছেন, সেটা জানার জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। সন্তোষজনক জবাব পেলে ছেড়ে দেওয়া হবে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।