আনোয়ারায় ইমামের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা!

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বিষপানে মৌলনা মোহাম্মদ ইলিয়াছ রজায়ী (৩২) নামে এক মসজিদের ইমামের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।নিহতের পরিবার এটিকে হত্যাকাণ্ড দাবি করলেও অভিযুক্তদের পরিবার বলছেন নিজেই বিষপান করেছেন মৌলনা মোহাম্মদ ইলিয়াছ।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা গ্রামে মৌলানা মুহাম্মদ ইলিয়াছের (৩২) রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নারীসহ ৪ জনকে আসামি করে আনোয়ারা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের ভাই মোহাম্মদ ইদ্রিছ।

মামলার আসামিরা হলেন— জান্নাতুল মাওয়া নিপা (২৩), তার পিতা আহমেদুর রহমান (৬৫) এবং তার দুই ভাই মোহাম্মদ খোরশেদ (৩৫) ও আবুল কালাম (৪৫)।তাদের মধ্যে নিপা ও খোরশেদকে ঘটনার পর গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিহত ইলিয়াছ বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নের আবদুল আমিনের পুত্র। সে চট্টগ্রাম নগরীর একটি জামে মসজিদে চাকরি করতেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত মৌলানা মুহাম্মদ ইলিয়াছ রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা এলাকায় ইমাম থাকাকালীন স্থানীয় জাফরের স্ত্রীর জন্নাতুল মাওয়া নিপা সাথে পরকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত হন। তাদের সম্পর্কের বিষয়টি স্থানীয়ভাবে জানাজানি হলে নিপার স্বামী জাফর সামাজিক বৈঠকের মাধ্যমে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দুই সন্তানের জননীকে তালাক দেন। ইমামকেও চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন মসজিদ পরিচালনা কমিটি। সর্বশেষ গত বুধবার গভীর রাতে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা এলাকার বাইঘ্যার ঘাটের আহমেদুর রহমানের ঘরে রিপার সাথে দেখা করতে যান মৌলানা ইলিয়াছ।সেখানে তিনে বিষে আক্রান্ত হোন।

এইদিকে নিহতের ভাই মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, রাত ১টা ২১ মিনিটে আমার মোবাইলে একটি ক্ষুদেবার্তা আসে আমার ভাইয়ের মোবাইল থেকে। ক্ষুদেবার্তায় লেখা ছিলো ‘ইউসুফ রিফার ভাইরা আমাকে এনে বিষ খাওয়াই দিচ্ছে’ আমি গহিরা?

এটি পেয়ে দ্রুত আমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনোয়ারায় ছুঁটে আসি। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার করে তাকে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন।

এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে দাবি করে নিহতের স্ত্রী নাহিদা আকতার (২৬) বলেন, ২০২০ সালের ১৩ জুলাই আমাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিবাহের দুই মাস পরে গহিরা এলাকার একটি মসজিদে চাকরি নেন আমার স্বামী। সেখানে জাফর আহমদ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে উনার পরিচয় হয়। এরপর আমরা শুনতে পাই জাফর আহমদের স্ত্রীর সঙ্গে উনার সম্পর্কের কথা। তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে জাফর আহমদ তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেন এবং আমার স্বামীও সেখান থেকে বাড়িতে চলে আসে। এটি একটি পরিকল্পিত ভাবে হত্যাকাণ্ড। আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে তারা। আমি আমার স্বামীর হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

এইদিকে জান্নাতুল মাওয়া নিপার ছোট ভাই মুহাম্মদ আবু তাহের বলেন, বুধবার সাড়ে বারোটার দিকে আমাদের বাড়ির উঠানে এসে চিৎকার করে দরজা ধাক্কাতে লাগে মৌলানা ইলিয়াছ। আমার আব্বা দরজা খুলে জানতে চায় এখানে কি? সে আমার আব্বাকে ধাক্কা দিয়ে বলেন নিপা ফোন রিসিভ না করায় এখানে এসেছি। এসময় আমার ভাই এসে তাকে কয়েকটি চড় থাপ্পর মারে। এসময় সে কোমর থেকে বিষের বোতল বের করে তার মুখে ঢেলে দেয়। পরে তাকে বাঁচানোর জন্য আমার আব্বা আর ভাই তার মুখে হাত দেয়। তখন সে দ্রুত বদনা থেকে পানি খেয়ে দৌঁড়ে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে গহিরা ফকির হাটে চলে যায়। সেখানে সে পড়ে গেলে স্থানীয়রা তাকে মেডিকেল নিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, তার জন্য আমার বোনের সংসারটা নষ্ট হয়ে গেছে। আমার বোনের দুইজন কন্যা সন্তান রয়েছে। যাদের একজন প্রতিবদ্ধী। তালাকের ঘটনার পর আমরা বোনকে শহরে নিয়ে আসি সেখানেও এসে বিরক্ত করতে থাকে মৌলানা ইসমাইল। এসময় সে আর কখনও বিরক্ত করবে না বলে একটি স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। এটি একটি ভিডিও ক্লিপ আমাদের কাছে আছে। যেটা দেখলে বুঝতে পারবেন পুরো ঘটনা। সে নিজে মরেছে এখন আমাদেরও মারতেছে।

জানতে চাইলে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর্জা মুহাম্মদ হাছান বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ৪ জনকে আসামি করে নিহতের ভাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর ২ জনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।