বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রে ঘটনাস্থলে না থেকেও মামলার আসামী হয়েছেন বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সংগঠক গোলাম রসুল নিশান।
মঙ্গলবার(১৪ মে) সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন।
নিজেকে নির্দোষ দাবি করে গোলাম রসুল নিশান সংবাদ সম্মেলনে আকবরশাহ এলাকায় দন্ত চিকিৎসক কোরবান আলীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রমাণসহ বিস্তারিত তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে নিশানের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত আলী রেজা রানার দীর্ঘদিনের বিরোধের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
গোলাম রসুল নিশান বলেন, আলী রেজা রানা নিজেকে বায়তুশ শরফ মাদ্রাসা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করলেও মহানগর এক বিএনপির নেতার সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। তার সঙ্গে ছবিও আছে।
দীর্ঘদিন ধরে রানা ইস্পাহানী স্কুল এবং আশেপাশে বিভিন্ন স্কুলের কিশোরদের নিয়ে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করে। পশ্চিম ফিরোজশাহ এলাকার অধিবাসী সামী নামে এক যুবক কিশোর গ্যাংয়ের প্রতিবাদ জানালে উল্টো
গত ফেব্রুয়ারিতে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে পুলিশ যাচাই বাছাই করে সামীর বিরুদ্ধে কোন তথ্য প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে ওই সময়ে ছেড়ে দেয়।
তিনি বলেন, আমি যেহেতু রেজিস্ট্রার্ড সংগঠন ফিরোজশাহ সমাজকল্যাণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক, বিভিন্ন সময়ে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করতে হয়। আমরা কোন ঘটনা সামাজিকভাবে সমাধান করতে না পারলে এলাকার সম্মানিত কাউন্সিলর এর কাছে কিংবা নিকটস্থ থানায় গিয়ে আইনগতভাবে সমস্যার সমাধানের উপদেশ দিয়ে থাকি। সেই দ্বায়িত্ববোধ থেকেই পরিবেশ শান্ত করার জন্য আমি ওই অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে সেদিন রাতেই গ্রিন টাওয়ারের সামনে বৈঠকের কথা বলে নিয়ে যায়।
‘ বৈঠকে প্রমাণিত হয় যে, নির্দোষ সামীকে, আলী রেজা রানা ষরযন্ত্রমূলকভাবে পুলিশের হাতে তুলে দেয় এবং যেহেতু সে সামীর চেয়ে বয়সে অনেক ছোট সবাই তাকে সামীর কাছে দু:খ প্রকাশ করতে বললে রানা অস্বীকৃতি জানায়। উলটো রানা হুমকি দেয় এলাকার কেউ বেশি বুঝলে তাকেও ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশে উঠিয়ে দিবে।
গোলাম রসুল নিশান বলেন, ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্যে আলী রেজা রানা ওই বৈঠক চলাকালীন কথোপকথন গোপনে অডিও রেকর্ড করে। তার উদ্দেশ্য যদি খারাপ-ই না হয় তবে সে কেন একটি বৈঠকের কথোপকথন গোপনভাবে অডিও রেকর্ড করবে? পুলিশ প্রশাসন এবং ৯৯৯ এর সেবা নিয়ে কোন ধরনের কটূক্তি করিনি।
গোলাম রসুল নিশান বলেন, তারাবীহ নামাজের সময় গ্রিন টাওয়ারের সামনে কয়েকদিন ধরে কিশোর বয়সী ছেলেদের মারামারি করতে দেখা যায়। ওই বিষয়ে এক স্থানীয় ব্যক্তি এলাকার একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আমিও তার এই মতামতের সাথে সহমত পোষণ করি। কারণ আমিও মারামারি করতে দেখেছি। ওই বিষয়ের সমাধানের আলোচনা না করে বিএনপির অন্যতম বড় পৃষ্টপোষক ফজলুল করীম টিপু গ্রুপে আজেবাজে মন্তব্য করেন। তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন আজেবাজে মন্তব্য করেন।
‘তিনি এক অডিও বার্তায় আমি এলাকা থেকে চলে গেলে বা মরে গেলে মিষ্টি বিতরণ করবেন বলেও হুমকি প্রদাণ করেন। ৩ এপ্রিল ভুয়া সংগঠন সমাজ পরিষদের তত্বাবধানে এলাকায় পুলিশিং কমিটির নাম দিয়ে লক্ষাধিক টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ আসায় ওই চাঁদাবাজির বিষয় নিয়ে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটা পোস্ট দিই। এছাড়া গত জাতীয় নির্বাচনে ফুলকপি মার্কার প্রচারনায় সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি। এই বিষয়েও আমি লেখালেখি করি। এই নেতা আমার উপরে চরম আকারে ক্ষিপ্ত হয়ে দন্ত চিকিৎসক কোরবান আলীর নিহত হওয়ার সময়ে আমার কোন ধরনের উপস্থিতি ও সম্পৃক্ততা না থাকা সত্বেও আসামীর তালিকায় আমার নামের অন্তর্ভুক্তি।
তিনি বলেন, কারণ বাদি আলী রেজা রানা ও তার কিশোর গ্যাং এলাকায় বিএনপি নেতা ফজলুল করিম টিপুর পরামর্শে পরিচালিত। দন্ত চিকিৎসক কোরবানী আলীর আহত হওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ ভাল করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, পুলিশিং কমিটির সেক্রেটারি মোজাম্মেল হোসেন শাহীনের ২ ছেলে সানীম এবং তানিমের উপস্থিতি রয়েছে। ঘটনার সময় আমি স্বপরিবারে ইফতারের দাওয়াতে হালিশহর অবস্থান করছিলাম। এজাহারভুক্ত ১২ জন আসামীর ১১ জন অনুপস্থিত এবং ৩ নং আসামী সোহেল কে কোরবান আলী, মামলার বাদী আলী রেজা রানা ও তার বন্ধুরা মিলে বেধরক মারধর করছিল।
এর আগে সোমবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে দন্তচিকিৎসক কোরবান আলী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিবৃতি দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। এতে তারা বলেন, ঘটনাস্থলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রসুল নিশান ছিলেন না, তবু হত্যাকাণ্ডে ষড়যন্ত্র করে তাকে জড়ানো হচ্ছে।
বিবৃতিদাতার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি দুজন ও সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন ৩ জন। বাকিরা বিভিন্ন স্তরের সাবেক নেতা।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।