যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর পর প্রত্যেক বাংলাদেশিকে চাকুরি পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। পড়াশোনা শেষ করে বা সরাসরি চাকুরিতে প্রবেশ করতে গেলে সম্মুখীন হতে হয় নানান বাধার। চাকুরি পেলেও তার বেতন এবং মান অনেকটাই নিম্নমানের হয়ে থাকে। তবে সম্প্রতি বছরগুলোতে বাংলাদেশি আমেরিকানদের ভাগ্যে খুলছে শিক্ষাউদ্যেক্তা ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপের হাত ধরে। তার প্রতিষ্ঠিত আইটি প্রতিষ্ঠান পিপল এন টেক’র মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে এখনও পর্যন্ত ১০ হাজারের অধিক বাংলাদেশি আমেরিকান বছরে লাখ ডলারের ওপরে আয় করছেন, সহজে সুযোগ পাচ্ছেন বড় বড় প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া তার প্রতিষ্ঠিত ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি উচ্চশিক্ষায় ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম খবরের সাথে একান্ত আলাপকালে বিদেশের মাটিতে একজন সফল উদ্যেক্তা হয়ে ওঠার গল্প শুনান ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ। তিনি বলেন, শুরুতে যখন এদেশে আসি চাকুরি পেতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। পরে নিজে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সম্ভব হলেও অনেক বন্ধু-বান্ধবকে দেখিছে ভোগান্তিতে পড়তে। তারপর বাংলাদেশি আমেরিকানদের কথা ভেবে যাত্রা শুরু করি পিপল এন টেকের।
তিনি বলেন, আমার এক বন্ধু ছিলো যে কম্পিউটার সায়েন্স থেকে ব্যাচেলর করার পর টেক্সি চালাতো। একদিন সে আমার বাসায় এসে সবকিছু খুলে বলে। আমার প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে ৫-৬ মাসের বিভিন্ন কোর্স করাই। কোর্স শেষে প্রথমেই সে আইবিএম থেকে অফার পায়। তার শুরের বেতন ছিলো বছরে লাখ ডলারের বেশি।
এরপর আমার কনফিডেন্ট আরও বেড়ে যায়। তারপর নিজের বাড়ি কিনে সেখানকার বেজমেন্টে প্রায় ৩ শতাধিক মানুষকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাকুরির ব্যবস্থা করি। সেই যাত্রার পর থেকে এখন প্রায় ১০ হাজারের অধিক মানুষ আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভালো জব পেয়েছেন। যাদের প্রত্যেকের বেতন ৬ ডিজিটের ওপরে।
আবু বকর হানিপ বলেন, প্রতি বছর প্রায় ৮৫ হাজার দক্ষ জনবল নেয় যুক্তরাষ্ট্র। সেদেশে কাজের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তবে এরজন্য নিজেকে দক্ষ হতে হবে। প্রযুক্তিতে দক্ষ হলে আমেরিকায় গিয়ে কাউকে বসেও থাকতে হবে না তুলনামূলক নিম্নমানের কাজও করতে হবে না।
পিপলস এন টেক দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশেও একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শাখার মাধ্যমে এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখান থেকে বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করার মাধ্যমে বাংলাদেশের অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণী আইটি খাতসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ, দক্ষ, যোগ্য পেশাদার জনশক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। যারা দেশে তো বটেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খুব দ্রুত এবং সহজেই চাকরিতে নিয়োগ পেয়ে যাচ্ছেন।
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ বলেন, একটা সময় এসে চিন্তা করলাম শিক্ষার সাথে দক্ষতাকে জুড়ে দিতে পারলে আর কেউ বেকার থাকবে না। মার্কিন মুল্লুকে নতুন করে একটা বিশ্ববিদ্যালয় করা বেশ চ্যালেঞ্জিং কাজ। যার জন্য ২০০৮ সালে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় কিনে নিয়ে পাঠ্যবইয়ের সাথে বাস্তব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা করি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ধারার একটি উচ্চ শিক্ষা লাভের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর হিসেবে তার দায়িত্ব পালন এবং এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি এক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে অবদান রেখে চলেছে। তুলনামূলক স্বল্প খরচে এখান থেকে উচ্চতর ডিগ্রিলাভের জন্য রয়েছে বেশ ভালো সুযোগ। যারা মেধাবী শিক্ষার্থী, তারা বৃত্তি লাভের মাধ্যমে কম খরচে পড়াশোনা করতে পারছেন।
তিনি বলেন, আমেরিকান অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগেই একাডেমিক দিকটাকে বেশ জোর দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে সেখান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি লাভের পর একজন শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি লেভেলে চাকরি নিতে হয়। অথচ আমাদের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে একজন শিক্ষার্থীকে আমরা একাডেমিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মধ্যম পর্যায় কিংবা উচ্চতর পর্যায়ের পদে চাকরির জন্য বাস্তবজ্ঞান প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ ও অভিজ্ঞ করে তুলছি। ফলে এখান থেকে পাশ করে বেরিয়েই তারা ভাল বেতনে চাকরি পেয়ে যাচ্ছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উন্নত জীবনযাপনের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠছে।
তিনি আরও বলেন, এক সময় বাংলাদেশ থেকে মার্কিন মুল্লুকে যাওয়া অধিকাংশ তরুণ যুবক লেখাপড়া না করে অডজব করে কিংবা ট্যাক্সি চালিয়ে জীবন ধারণ করত। অথচ বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বাংলাদেশি তরুণ যুবকদের অধিকাংশই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইটি সংশ্লিষ্ট চাকরিতে বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। ফলে তাদের জীবনযাপন বদলে গিয়ে উন্নত পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে খুব দ্রুতই। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে শুরুতে তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভের সুযোগ থাকলেও ক্রমেই এখানে ব্যবসা প্রশাসনসহ অন্যান্য বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা লাভের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আবু বকর হানিপ বলেন, এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ এ আই বিষয়সহ ডাটা সায়েন্স, সাইবার সিকিউরিটি, এন্টারপ্রেণারশীপসহ নতুন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমান সময়ের উপযোগী নানা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রিলাভের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সরাসরি চাকরিতে যোগ দেওয়ার মত করে গড়ে তোলা হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। গেলো ২ বছরে আমাদের প্রতিষ্ঠানে ২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এখানে ১১৩ জন স্থায়ী-অস্থায়ী শিক্ষক রয়েছে। যাদের অভিজ্ঞতাও অনেক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। অচিরেই লস অ্যাঞ্জেলস, নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া শহরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শাখা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতেও আমেরিকান একটি উচ্চ শিক্ষা লাভের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির শাখা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আমার ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিকে একটি মডেল ইউনিভার্সিটি হিসেবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই। যে তিনটি লক্ষ্য নিয়ে আমার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে একই সঙ্গে -ডিগ্রি অর্জন, কাজের দক্ষতা অর্জন এবং এখান থেকে পাশ করার সাথে সাথে চাকরিতে মধ্য কিংবা শীর্ষ পর্যায়ের পদে যোগদান। তার সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দক্ষ, অভিজ্ঞ, কর্মক্ষম জনশক্তি গড়ে তুলতে চাই। এর মাধ্যমে ব্যক্তি পর্যায়ে যেমন শিক্ষার্থী বেশ ভালোভাবে কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের সুযোগ পাবে এবং তাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সক্ষম শক্তিশালী সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে উঠবে দেশে দেশে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।