পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আয়না ঘর থেকে মুক্ত হয়েছেন সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম (ব্যারিস্টার আরমান)।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে এই সংবাদ পরিবেশন হয়েছে। এতে আশা জাগছে এক যুগের বেশী গুম থাকা চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা ও ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ এস এম শহিদুল আলম সিরাজের পরিবারে। ২০১২ সালের ৬ মার্চ বিএনপির ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার পর চট্টগ্রাম ফেরার পথে নিখোঁজ হন সিরাজ।
আমান আযমী জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আজমের মেঝো ছেলে আর ব্যারিস্টার আরমান জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর ছোট ছেলে। দুইজনই তথাকথিত যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত ছিলেন।
সোমবার (৫ আগস্ট) রাতে কর্নেল সামসের নেতৃত্বে রাতে ২০ থেকে ২৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের কচুক্ষেত এলাকায় হাসিনার সেই বিতর্কিত ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সমালোচিত আয়না ঘরের সামনে অবস্থান নেন।
তারা গণমাধ্যমকে বলেন, “ডিজিএফআইয়ের আয়না ঘরে অনেক মানুষকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বন্দিদের ছাড়িয়ে নিতে আমরা অবস্থান নিয়েছি। তাদের অক্ষত অবস্থায় হস্তান্তর না করা পর্যন্ত আমরা ফিরব না। বন্দিদের মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান চলবে। আমাদের সঙ্গে গুম হওয়া স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাকও যোগ দেয়। মুক্তির জন্য জন্য চাপ প্রয়োগের এক পর্যায়ে মুক্ত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়।”
২০১৬ সালে গুমের স্বীকার হোন আবদুল্লাহিল আমান আযমী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
একই বছর ৯ আগস্ট ব্যারিস্টার আহমদ বিন কাশেম আরমানকে নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মিরপুর ডিওএইচএস’র ১১ নম্বর সেকশনের ৭ নম্বর রোডের ৫৩৪ নম্বর বাড়ির দোতালায় থাকতেন তিনি। এই বাসা থেকেই দুই শিশু সন্তান, স্ত্রী ও বোনের সামনে থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে। এরপর আর আনুষ্ঠানিকভাবে তার হদিস পাওয়া যায়নি।
২০১২ সালের ৬ মার্চ বিএনপির ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার পর চট্টগ্রাম ফেরার পথে নিখোঁজ হন চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা ও ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ এস এম শহিদুল আলম সিরাজ।
পরে পরিবারের সদস্যরা খুলশী থানায় ও পাঁচলাইশ থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। কিন্তু, গত প্রায় ১২ বছরে পুলিশ তাকে খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে গত এক যুগ ধরে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন সিরাজের স্ত্রী সোলতানা পারভিন ও তার দুই ছেলে।
সিরাজের স্ত্রী সোলতানা পারভিন বলেন ‘২০১২ সালের ৬ মার্চ রাতে তিনি আমাকে ফোন করে বলেছিলেন যে ফিরে আসছেন। এটা ছিল আমাদের শেষ কথোপকথন। সকালে তাকে ফোন দিলে তার বন্ধ পাওয়া যায়। দুই ছেলেকে নিয়ে আমি এখনো স্বামীকে খুঁজছি। আমি জানি না সে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে। যদি সে মারা যায় তবে দয়া করে লাশ হস্তান্তর করা হোক বা তার হদিস আমাদের বলা হোক।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।