আলোকিত রাজনীতিবিদ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর জন্মদিন আজ

আজ ৩ মে মঙ্গলবার, প্রয়াত রাজনীতিবিদ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ৭৭তম জন্মদিন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এই সাংসদ ১৯৪৫ সালের ৩ মে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার হাইলধর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

আখতারুজ্জামান চোধুরী বাবু ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। সব মানুষের বিপদে-আপদে দরদি হৃদয় নিয়ে এগিয়ে আসতেন, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। তিনি সবার নিকট দানবীর বাবু মিঞা নামে পরিচিত ছিলেন। যার ব্রত ছিল মানব কল্যাণ, আল্লাহ মানুষকে শ্রেষ্ঠ করেছেন মানব কল্যাণের জন্যই। তিনি আমৃত্য তাই করেছেন। দলের দুঃসময়ে, প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে তার সরব উপস্থিতি প্রতিটি নেতাকর্মীর মাঝে প্রাণ সঞ্চার করতো। দুর্দিনে সময়ের প্রয়োজনে তিনি কখনও নির্লিপ্ত থাকেননি।

আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু দীর্ঘ সময় ধরে ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছাড়াও জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন চারবার।

নবম জাতীয় সংসদে তিনি ছিলেন পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছিলেন নুরুজ্জামান চৌধুরী। তিনি আইনজীবী ছিলেন। তাঁর মাতার নাম খোরশেদা বেগম। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরুস্কার স্বাধীনতা পদকে (মরনোত্তর) ভূষিত করেন।

১৯৫৮ সালে পটিয়া হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ওই বছরই ঢাকা নটরডেম কলেজে ভর্তি হন। ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে পড়ার সময় তিনি বৃত্তি পেয়ে আমেরিকার ইলিনয় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে ভর্তি হন। পরে তিনি নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনে পড়ালেখা করেন। সেখান থেকে এসোসিয়েট ডিগ্রি নিয়ে ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরেন। ১৯৬৫ সালে ব্যবসা শুরু করেন। এর আগে তিনি ১৯৫৮ সাল থেকে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়া থেকে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হন। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় তার পাথরঘাটা জুপিটার হাউজ থেকে সংগ্রাম কমিটির কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামে আসার পর জুপিটার হাউস থেকে সাইক্লোস্টাইল করে প্রচার করা হয়। তার বাসা থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ সব জায়গায় পাঠানো হয়।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভারতে যান এবং সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মুজিবনগর সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির সদস্য ছিলেন।

১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমপিএ) হিসেবে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ১৯৭২ সালে গঠিত বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য হন এবং বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতার পর ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ২০০৯ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

স্বাধীনতার পূর্বে তিনি বাটালি রোডে রয়েল ইন্ডাস্ট্রি নামে একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে আসিফ স্টিল মিল, জাভেদ স্টিল মিল, আসিফ সিনথেটিক, প্যান আম বনস্পতি, আফরোজা অয়েল মিল, বেঙ্গল সিনথেটিক প্রোডাক্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। ভ্যানগার্ড স্টিল মিল, সিনথেটিক রেজিন প্রোডাক্ট ক্রয় করে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে জামান শিল্পগোষ্ঠীর গোড়াপত্তন করেন। তিনি বিদেশি মালিকানাধীন আরামিট মিল কিনে নেন। তিনি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল) এর উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

তিনি দু’দফায় চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৮৮ সালে তিনি দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠক এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ওআইসিভুক্ত দেশসমূহের চেম্বারের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি ৭৭ জাতি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

তিনি ব্যক্তি জীবনে ৩ পুত্র ও ৩ কন্যার জনক। ২০১২ সালের ৪ঠা নভেম্বর বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর পর জ্যৈষ্ঠ ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ একই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সফল ভূমিমন্ত্রী হিসেবে সারা দেশে প্রশংসিত হয়েছেন। মেজ ছেলে আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ইসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। ছোট ছেলে আসিফুজ্জামান চৌধুরী জিমিও একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।

এই মহান নেতার জন্মদিন উপলক্ষে আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগ বাবুর কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন, খতমে কোরআন ও মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।