আশ্রয়ণের ঘর দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে

চট্টগ্রামের আনোয়ারার সদর ইউনিয়নের অসীম ধর দুই প্রতিবদ্ধী শিশুকে নিয়ে বসবাস করেন প্রতিবেশীর ছোট্ট একটি খুপড়ি ঘরে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার আশায় এনজিও ঋণ ও মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ২ লাখ টাকা দেন একই এলাকার কাঞ্চন ধর নামে ইউপি সদস্যের কাছে। কিন্তু এখনও ঘর কিংবা টাকা কিছুই না পেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের কাছে।

তার মতো একই অবস্থা ওই এলাকার আর ৪-৫ জন ভূমিহীনের। গত মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন অসীম ধর, সুসেন ধর ও ববি ধর নামে তিন ভুক্তভোগী পরিবার। অভিযুক্ত কাঞ্চন ধর আনোয়ারা উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। সকলে একই ইউনিয়নের স্বপন ধরের বাড়ির বনিকপাড়া ধানপুরা এলাকার বাসিন্দা।

অভিযোগ উঠেছে, সবার কাছ থেকে একই পরিমাণ টাকা নিয়েছেন ওই ইউপি সদস্য। পাওয়ানদারের ভয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে রাস্তায় বের হতে পারছেন না এসব ভুক্তভোগীরা।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য কাঞ্চন ধর। তিনি বলেন, তারা ভূমিহীন,তাই বাড়ির পাশে সরকারি কিছু খাস জমি মাটি ভরাট করে ঘর দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করে দিয়ে ছিলাম। আশ্রয়ণ ঘরের জন্য সরকারের কাছে তারা আবেদনও করেছিল, কিন্তু ঘর না পাওয়ার কারণে সকলে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে।

ভুক্তভোগী অসীম ধর বলেন, ইউপি সদস্য কাঞ্চন ধরকে বিভিন্ন এনজিও ঋণ ও মহাজনের কাছ ধেকে চড়া সুদে ২ লাখ এনে দিয়েছিলাম শুধুমাত্র একটি ঘরের জন্য। ঘরতো পেলাম না, সঙ্গে টাকাও পাচ্ছি না। টাকা ফেরত চাইলে প্রমাণপত্র ও ভয়ভীতি দেখায় আমাদের। টাকা নেওয়ার বিষয়ে সকল কথাবার্তা আমাদের মুঠোফোনে রেকর্ড করে রাখছি।

তার স্ত্রী প্রিয়াংকা ধর বলেন, আমরা দুইটা প্রতিবদ্ধী শিশু নিয়ে প্রতিবেশীর ছোট্ট একটি খুপড়িঘরে ভাড়ায় থাকি। পোষাক কারখানায় চাকরি করে এখন সংসার চালাচ্ছি। জমি কিনে ঘর করব সে সুযোগও নেই। এনজিও ঋণ ও মহাজনের সুদের টাকা দিতে-দিতে শেষ হয়ে যাচ্ছি আমরা।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সদর ইউনিয়েনের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেতে ভুক্তভোগী ১০-১৫জন ইউপি সদস্য কাঞ্চন ধরের কাছে যান। কাঞ্চন ধর তাদের কাছে প্রতিঘরের জন্য ২ লাখ টাকা করে দাবি করেন। অসহায় পরিবার গুলো ঘর পাওয়ার আশায় এনজিও ঋণ ও মহাজনের চড়া সুদে টাকা নিয়ে কাঞ্চন ধরকে দেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ পেরিয়ে গেলেও ঘর না পাওয়ায় ভুক্তভোগীরা টাকা চাইলে ইউপি সদস্য ভুক্তভোগীদের নিয়ে যান চেয়ারম্যানের কাছে। পরে ইউপি সদস্য তড়িঘড়ি করে বাড়ির পাশে সরকারি খাস দখল করে মাটি ভরাটের পর পরিবার গুলো বুঝিয়ে দেন সরকারি খাস জমিটি। কিন্তু কিছুদিনপরই সরকারি খাস জমিটি প্রশাসন দখলমুক্ত করে নিলে আবারও ছুঁটে যান ইউপি সদস্যের কাছে। কিন্তু টাকা ফেরত না দিয়ে গত দেড় বছর ধরে ঘুরাচ্ছেন তাদের। এসব পরিবার গুলো ঘর এবং টাকা কোনোটিই না পেয়ে মানবতার জীবনযাপন করছেন।

অপর ভুক্তভোগী ববি ধর বলেন, একটি ঘর পাওয়ার কথা তখন আমার স্বামীকে জানিয়েছিলাম, তখনই তিনি মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে দিয়েছিলেন ইউপি সদস্যকে দেওয়ার জন্য। এখন এসব টাকার জন্য আমার সংসার ভেঙে যাওয়ার অবস্থা হয়ে গেছে। ঘর না পেলেও আমরা টাকা গুলো ফেরত চাই শুধু।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর শুধুমাত্র অসহায় ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দ। ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, তা অবশ্যই তদন্ত করা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরসঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।