আহত শেষ ব্যক্তিটি ঘরে না ফেরা পর্যন্ত জেলা প্রশাসন সঙ্গে আছে–ডিসি

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান অগ্নিকাণ্ডে আহত ব্যক্তিদের স্বজনদের অভয় দিয়ে ঘোষণা করেছেন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেষ রোগী ঘরে না ফেরা পর্যন্ত জেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে। জেলা প্রশাসনের সহায়তা ডেস্ক রোগীদের সেবা প্রদান করবে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় দুর্ঘটনার পর থেকে জেলা প্রশাসন গৃহীত নানা উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, মেডিকেলের জরুরী বিভাগে আসা সাধারণ রোগীদেরও ঔষধ সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এই সহায়তা কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানের জন্য ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০০ জন স্টাফ পর্যায়ক্রমে ২৪ ঘন্টা দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়াও স্হানীয় রাজনৈতিক নেতা কর্মী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ নগদ অর্থ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাদ্য সামগ্রী ইত্যাদি প্রদান করে মানবিক এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত এ সেবা কার্যক্রম চলমান থাকবে।

জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হসপিটালে থাকা সীতাকুণ্ডের বি এম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের দোরগোড়ায় আর্থিক সহায়তা, ঔষধ সামগ্রী, খাদ্যসহয়তা সহ নানাবিধ সহায়তার মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেষ রোগী ঘরে না ফেরা পর্যন্ত জেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে। জেলা প্রশাসনের সহায়তা ডেস্ক রোগীদের সেবা প্রদান করবে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (৪ জুন) রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ির বি.এম কন্টেইনার ডিপোতে সংগঠিত অগ্নিকাণ্ডে দুর্ঘটনায় হতাহতদের উদ্ধার ও দ্রুত সেবা প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের উদ্যোগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি কেয়ারের সামনে জরুরী সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়।

এই সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মেডিকেলে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আগত হতাহত ব্যক্তিদের সেবা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। এই সহায়তা কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম মুমূর্ষু রোগীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন চিকিৎসা সহায়তা যেমন ঔষধ, নগদ অর্থ, শুকনো খাবার জরুরী যাতায়াত ব্যবস্হার জন্য এম্বুলেন্স প্রদান, নিহত ব্যাক্তি শনাক্তকরণে ডিএনএ সংরক্ষণের জন্য ডিপফ্রিজের ব্যাবস্থা। এছাড়াও নিহতদের শনাক্তকরণের পরে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করার সময় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগদ ৫০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়াও আহত রোগীদের স্বজনদের মাঝে ২৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা করেন।

জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের সহায়তা কেন্দ্রের উদ্যোগে ভর্তিকৃত রোগীদের ওয়ার্ডে গিয়ে গিয়ে রোগীর স্বজনদের মাঝে ও ভলান্টিয়ারদের নাস্তাসহ খাবার প্রদান করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের সহায়তা কেন্দ্রের উদ্যোগে মুমূর্ষু রোগীদের জন্য রক্তের ব্যবস্হা করা হয়। এই রক্ত প্রদানে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরবৃন্দ এগিয়ে আসেন।

এছাড়াও জেলা প্রশাসনের সহায়তা কেন্দ্রের উদ্যোগে নিহত ব্যক্তি, মুমূর্ষু আহত ব্যক্তি ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এ সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নিহত ও আহত ব্যক্তির স্বজনদের নানাবিধ সহায়তা প্রদান করা হয়। এ পর্যন্ত দুইশো এর অধিক রোগীদের সরাসরি সহায়তা কেন্দ্রে ঔষধ প্রদান করা হয়। প্রায় ৩০০ এর অধিক রোগীকে বিভিন্ন ফার্মেসী থেকে ঔষধ ক্রয় করে বিনা মূল্যে প্রদান করা হয়।

আহত শেষ ব্যক্তিটি ঘরে না ফেরা পর্যন্ত জেলা প্রশাসন সঙ্গে আছে–ডিসি 1

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান নিজে প্রতিদিন গভীর রাত অবধি চট্টগ্রাম মেডিকেলে জেলা প্রশাসন সহায়তা কেন্দ্রে অবস্থান করে সকল কার্যক্রম তদারকি করছেন। সকল অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১০০ স্টাফ ও ২০০ স্বেচ্ছাসেবক পালাক্রমে চমেকে দায়িত্ব পালন করছেন।

সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডে আহত জামালপুরের বাসিন্দা মাসুদ রানা আইসিওতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পঞ্চম দিনের মাথায় মঙ্গলবার রাতে মারা যান। মাসুদ রানার স্ত্রী মোছাম্মৎ সুমি কান্নজড়িত কন্ঠে বলেন, অচেনা একটা শহর, এমন দিশেহারা অবস্থায় জেলা প্রশাসন আমাদের পাশে দাড়িয়েছে অভিভাবক হয়ে। সার্বক্ষণিক আমার স্বামীর চিকিৎসা তদারকি করেছে। দুঃখের বিষয় খোদার ডাকে সাড়া দিয়ে আমার স্বামী আমাদের ছেড়ে গেলেন।

জেলা প্রশাসনের সহায়তা ডেস্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায় চট্টগ্রাম মেডিকেলের আইসিইউতে বাকী একজন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জেলা প্রশাসন তার ব্যাপারে ডাক্তারদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে তার চিকিৎসার বিষয়ে আপডেট রাখছেন।

চমেক হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী জামাল উদ্দিনের ভাই হেলাল উদ্দিন বলেন, তৎক্ষনাৎ জেলা প্রশাসন ডেস্ক থেকে আমার ভাইয়ের রক্তের ব্যবস্থা করা হয়। জেলা প্রশাসন সহায়তা ডেস্কের প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা।

চমেকের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি মো. মহিউদ্দিন বি এম ডিপোর লোড-আনলোড কর্মী। তার কন্যা সাদিয়া জান্নাত জানান, এমন অসহায় মুহূর্তে আমাদের মাথার উপর ছায়া হিসেবে আবির্ভূত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সৃষ্টিকর্তা তাঁদের মঙ্গল করুক।

৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের আরেকজন রোগী নুরুল ইসলাম বলেন, আমার একমাত্র অভিভাবক আমার মা। তিনি এই কয়দিনে আমার সাথে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জেলা প্রশাসনের সদস্যরা আমাকে এক্সরে করতে নিয়ে গেছেন এবং প্রয়োজনীয় সকল সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, এই দুর্ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে বিভিন্ন হসপিটালে চিকিৎসাধীন আছেন আরও শতাধিক ব্যক্তি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।