ঘরের জন্য ইফতার কিনতে গিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে জনসম্মুখে এলোপাথাড়ি কোপানো এবং গুলি করার সময় ইফতার পর্যন্ত বাঁচতে চাওয়া কক্সবাজার সদরের মোরশেদ হত্যায় অভিযুক্ত পাঁচ আসামিকে আটক করেছে র্যাব। তাদেরকে শুক্রবার ভোরে সেহেরীর সময় টেকনাফ থেকে আটক করা হয়।
আটক আসামিরা হলো- মোহাম্মদ আলী ও তার ভাই মাহমুদুল হক (৫২), আবদুল্লাহ (৩০), আব্দুল আজিজ (২৮), নুরুল হক (৫৩)। এদের মধ্যে নুরুল হক সন্দেহভাজন বলে জানায় র্যাব। অপর চারজন এজাহার নামীয় আসামি।
শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাব-০৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ। তিনি বলেন, গত ৭ এপ্রিল বিকেলে সাড়ে ৪টায় কক্সবাজার সদর থানাধীন চেরাংঘর স্টেশনের তরকারীর দোকানের সামনে কতিপয় দুস্কৃতিকারী দা, চোরা, হাতুড়ি, কিরিচ, লোহার রড, বন্দুক ও লাঠি দিয়ে জনসম্মুখে নির্মম ও নৃশংসভাবে এলোপাথাড়িভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে মোরশেদ আলীকে (৪০) উপর্যুপরি আঘাত করে চলে যায়। হামলাকারীরা স্থানীয় ভাবে চিহ্নিত অপরাধী হওয়ায় কেউ তাদের বাঁধা দিতে আসেনি।
পরবর্তীতে স্থানীয়রা মুমূর্ষু মোরশেদকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের ভাই জাহেদ আলী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আরও ৮ থেকে ১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
জানা গেছে, ভিকটিমের পরিবারের লোকজন পিএমখালী ইউনিয়নের ১০ নং পানি সেচ স্কিম পরিচালনা করে আসছিল। খুনীরা অন্যায়ভাবে জোর পূর্বক ১০ নং পানি সেচ স্কিম নিজেদের দখলে নিয়ে চাষীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা দাবীসহ অন্যায় অত্যাচার করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে থাকার কারনে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন উক্ত স্কিম ফিরে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকলে আসামীরা তাদের উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে।
মোরশেদ আলী দুস্কৃতিকারীদের বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদ করায় বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল। এমনকি বিভিন্ন সময় পথে ঘাটে আক্রমন করতে গেলে স্থানীয় উপস্থিত লোকজনের কারনে সফল হয় নাই।
যেভাবে মোরশেদকে হত্যা করা হয়-
ঘটনার দিন মোরশেদ বাড়ি হতে বের হয়ে ইফতার সামগ্রী কিনার জন্য কক্সবাজার সদর থানাধীন চেরাংঘর ষ্টেশনের তরকারীর দোকানের সামনে পোঁছলে দুস্কৃতিকারীরা দুই দিকের রাস্তা বন্ধ করে মোরশেদকে মাটিতে ফেলে প্রথমে ধারালো কিরিচ দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় গুরুতর জখম করে। এরপর আসামী আবদুল্লাহ(৩০) এবং আব্দুল আজিজ (২৮) লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মোরশেদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করলে মোরশেদ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আসামী মাহমুদুল হক ধারলো কিরিচ দিয়ে মোরশেদ আলীর ডান হাতে কোপ দিয়ে হাত থেকে কব্জি প্রায় বিছিন্ন করে ফেলে। আসামী মোহাম্মদ আলী (৪৫), মোরশেদ আলীর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য হাতুড়ি দিয়ে অন্ডকোষে উপুর্যপুরি আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
বাজারের লোকজন ভিকটিম মোরশেদকে উদ্ধার করার চেষ্টা করলে আসামী মোহাম্মদ আলী আগ্নেয়াস্ত্র বের করে ১৫ থেকে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষন করে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। উপস্থিত লোকজন ঘটনার ভিডিও করতে গেলে আসামীরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। রোজাদার মোরশেদ আলী ইফতার পর্যন্ত বাঁচার আকুতি জানালেও আসামীরা তাকে বাঁচতে দেয়নি।
র্যাব আরও জানায়, আসামী মাহমুদুল হক ছিল এই নারকীয় হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। এই নারকীয় হত্যাকান্ডের নেপথ্যে মদদদাতা ছিলেন মাহমুদুল হকের ভাই নুরুল হক। তাদেরকে কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র্যাব।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।