পাহাড় অরণ্যে ঘেরা নৈসর্গের সৌন্দর্যের নগরী বান্দরবান। পাহাড়ি প্রকৃতি, ছোট বড় ঝর্ণার সাথে কৃত্রিমভাবে গড়ে তোলা রিসোর্ট এই অঞ্চলের সৌন্দর্যে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। যার কারণে সুযোগ পেলেই প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে যান বান্দরবানের পাহাড়ে। তবে সম্প্রতি পাহাড়ের ‘অস্থিতিশীল’ পরিবেশ ও সন্ত্রাসীর নির্মূলে যৌথ অভিযানের কারণে ঈদের ছুটিতেও পর্যটক শূন্য বান্দরবান। যা একদিকে ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের হতাশ করছে অন্য দিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে ব্যবসায়ীদের।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদস্যদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং চলতি বছরে ২-৩ এপ্রিল রুমা-থানচি দুই উপজেলার সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি, ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ, পুলিশ ও আনসারের ১৪টি অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কেএনএফ এ সব ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কেএনএফ-এর সন্ত্রাসী তৎপরতা দমন ও লুট হওয়া অস্ত্র, টাকা উদ্ধারসহ সন্ত্রাসীদের নির্মূলে পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চলমান রয়েছে। এই অভিযানে উভয় পক্ষের হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। পাহাড়ে কেএনএফ’র তাণ্ডবে কারণে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পর্যটন সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকেলে বান্দরবান সদর থেকে সবচেয়ে কাছের পর্যটন স্পট মেঘলা ও নীলাচলে বেশিরভাগ স্থানীয় পর্যটক ছাড়া দুরদূরান্ত থেকে তেমন পর্যটকদের আনাগোনা একেবারে নেই বলা যায় এমন চিত্র দেখা গেছে।
ঢাকার ঘুরতে আসা ১১ জন পর্যটকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আজ সকালে বান্দরবান শহরে পৌঁছানো পর চাঁদের গাড়ি যোগে চিম্বুক, নীলগিরি ও শৈলপ্রপাত পর্যটন স্পটগুলো ঘুরেছি। প্রকৃতিতে কাছ থেকে দেখেছি, পাহাড়ি আঁকা বাঁকা মেঠো পথ আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। তবে পর্যটন স্পটগুলোতে তেমন করে লোকজন ছিল না। এক প্রকার ফাঁকা বলা যেতে পারে।
নীলাচলে পর্যটনকেন্দ্রে সপরিবার নিয়ে জেলা শহরের কাছে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থেকে বেড়াতে আসা কালাম হোসেন বলেন, এই ঈদের ছুটিতে সরকারি বন্ধ থাকাতে পরিবারের আবদার পাশাপাশি ম্যান ফ্রেস করতে ঘুরতে এসেছি। বান্দরবানে হঠাৎ করে অশান্তি হওয়ায় দুরদূরান্ত থেকে ভ্রমন পিপাসুরা এই জেলায় কিছুটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পাহাড়ের দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা কারণে হোটেল-মোটেল প্রায় শূন্য। গত বছর কয়েকগুটি বুকিং থাকলেও এবার ঈদের তেমন বুকিং নেই বললেই চলে। অনেকেই অর্থ উপার্জন পথ বন্ধ হয়ে পড়াতে কর্মচারীদের ছাঁটাইও করেছেন মালিক পক্ষরা। অন্যদিকে পর্যটক না থাকায় ট্যুরিস্ট গাইড ও গাড়ি চালকরা দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন। তবে পাহাড়ে সন্ত্রাসী নির্মূল করে দ্রুত জেলা সব পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার দাবি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।
এ ব্যাপারে বান্দরবান হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে হোটেল-মোটেল, রিসোর্টগুলোতে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন ধরনের অফার। চলছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। তারপরও পর্যটকের সাড়া মিলছে না। পাহাড়ের নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ার পর্যন্ত পর্যটন সাথে সংশ্লিষ্টরা এই ক্ষতি গুনতে হবে। আমরা চাই অচিরেই এই সুরাহা হোক।
বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মঞ্জিল মোরশেদ জানান, বর্তমানে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার দুর্গম এলাকার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটক যেতে না পারলেও জেলা সদর এবং এর আশপাশে ঘুরে বেড়াতে বাধা নেই। তবে পর্যটকদের সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।
এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর যেসব এলাকায় অভিযান চলমান রয়েছে সেসব এলাকা এড়িয়ে চলার জন্য সকল পর্যটকদের প্রতি আহ্বান করছি। পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে জেলার প্রতিটি স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।