উত্তীর্ণ হলেন চবির সেই কর্মকর্তার ছেলে!

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ‘এ’ ইউনিটে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ফলাফল প্রকাশের আগেই ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া চবির সেই কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে। প্রকাশিত ফলাফলের সাথে মিলেছে ফেসবুকে দেওয়া তথ্যেরও।

সোমবার (২২ মে) সকালে ‘এ’ ইউনিটের ফল প্রকাশের পর বিষয়টির সত্যতা পেয়েছে চট্টগ্রাম খবর।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কশীট শাখায় উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে আবীর চৌধুরী ‘এ’ ইউনিটে ১ হাজার ৬৯৬তম হয়েছেন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৮৮.৭৫। তার রোল নম্বর চট্টগ্রাম খবরের কাছে সংরক্ষিত আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবির আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. খাইরুল ইসলাম বলেন, আমাদের যেভাবে রেজাল্ট পাঠানো হয়েছিলো তা ক্রসচেক করে প্রকাশ করা হয়েছে। এর বাইরে ওই ব্যক্তি কিভাবে রেজাল্ট পেয়েছেন সেসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

এর আগে, রোববার (২১ মে) সন্ধ্যা ৬ টা ৪৫ মিনিটের দিকে তার ছেলে ‘এ’ ইউনিটে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছেন জানিয়ে নিজের ফেইসবুক একাউন্টে পোস্ট করেন। যার স্ক্রিনশর্ট এবং চবির ওই কর্মকর্তার মন্তব্যসহ ‘এ’ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশের আগেই ছেলের ফল পেয়ে গেলেন চবি কর্মকর্তা! শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক চট্টগ্রাম খবর। যদিও পোস্ট করার কিছুক্ষণ পর তিনি আবার সেটি ডিলিট করে দেন।

ফেইসবুক পোস্টে তিনি লিখেন,“আলহামদুলিল্লাহ আমার ছেলে আবীর চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের A Unit(সায়েন্স ফ্যাকাল্টি) ভর্তি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১৬৯৬ এবং কোটা তালিকায় ৩য় হয়েছে। সবার কাছে দোয়া প্রার্থী।”

অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘুরে ফলাফল প্রকাশের কোনো সূত্রই খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল তখনও ফলাফল প্রকাশ করেননি বলে জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে প্রশ্ন উঠে—কিভাবে নিজের ছেলের ফলাফল জানলেন চবির এই কর্মকার্তা। সমালোচনা শুরু হয় পুরো দেশব্যাপী।

প্রকাশের আগে ফলাফল কিভাবে পেয়েছেন এমন বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার চবির এই কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী মুঠোফোনে বলেন, আমার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এই ফলাফল পেয়েছে। পাওয়ার পর আমাকে জানিয়েছেন। যদিও আজ ফলাফল মিলে যাওয়ার পর আবার তার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়ে তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নূর আহমদ চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, প্রকাশের আগে উনি কিভাবে রেজাল্ট পেয়েছেন সে বিষয়টি আমরা জানি না। উনাকে শোকজ করা হয়েছে। উনি নোটিশের জবাব দিলে বিস্তারিত জানা যাবে।

এদিকে ‘এ’ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশে দেরি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা। এভাবে সময় বেশি নিয়ে ফলাফল প্রকাশের বিষয়টি ‘ভালো নজরে’ দেখছেন না বলে উল্লেখ করে ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন অসংখ্য অভিভাবক শিক্ষার্থীরা। তারমধ্যে ফলাফল প্রকাশের আগেই এক কর্মকর্তা এভাবে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ছেলের রেজাল্ট জানিয়ে দেওয়ার বিষয়টি সমালোচনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগে ‘পরীক্ষা না দিয়েও এক শিক্ষার্থী ফলাফল পাওয়া’র ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন অনেকেই।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ এবং ১৭ মে বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেরিন সায়েন্স এন্ড ফিশারিজ অনুষদভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। দু’দিনে চার শিফটে মোট ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উপস্থিত ছিলেন। ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মোট ৭৪ হাজার ৭০৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৯ হাজার ৬০৯ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। গত ১৯ মে রাতে ফলাফল প্রকাশের কথা জানানো হলেও এখনও সে ফলাফল প্রকাশিত হয় ২২ মে সকালে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।