উদ্বোধনের পর থেকেই তালাবদ্ধ কর্ণফুলী কলেজ ছাত্রীনিবাস

উদ্বোধনের চার বছর পরও তালাবদ্ধ রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী সরকারি কলেজের ছাত্রীনিবাস। এতে পাহাড়ের দুর্গম এলাকা থেকে আসা ছাত্রীদের নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাদের ভাড়াবাড়িতে বা মেসে থেকে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। এদিকে দিনের পর দিন ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে এক তলা ভবনের ছাত্রীনিবাস নির্মাণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা ছাত্রী নিবাসটির উদ্বোধন করেছিলেন। একতলা বিশিষ্ট ছাত্রীনিবাসটিতে ১২ জন ছাত্রী থাকার মতো আসবাবপত্র এবং সু-ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া ভবনটিতে পানি এবং বিদ্যুৎ এর সংযোগ স্থাপন করা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) কর্ণফুলী সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে অবস্থিত ছাত্রীনিবাসটিতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অযত্ন অবহেলায় এবং পরিত্যক্ত অবস্থায় ভবনটি পড়ে রয়েছে। সেইসাথে ভবনটি পুরো ফাঁকা এবং তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রীনিবাসটি নির্মাণের পর থেকে অদ্যবদি সেখানে কেউই থাকেনা। যার ফলে এক প্রকার অপরিষ্কার, অপরিছন্ন এবং নোংরা অবস্থায় পরিত্যক্তভাবে পড়ে আছে ছাত্রীনিবাসটি। ভবনটির আঙিনার চারপাশে ধুলাবালি, আবর্জনা জর্জরিত অবস্থায় দেখা গেছে।

এছাড়া ছাত্রীনিবাসের ভবনটির মুল গেইটের তালা দীর্ঘদিন না খোলার ফলে জং ধরে গেছে। ভবনের ভিতরেও ময়লা আবর্জনায় ভরা। ভবনটির ছাদেও বেশ বাজে অবস্থা। এদিকে দিনের পর দিন ভবনটি এভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে থাকার ফলে ছাত্রীনিবাসটি পুরোপুরি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ এইচ এম বেলাল চৌধুরী জানান, ছাত্রীনিবাসটি নিরাপত্তাজনিত কারণ এবং বাউন্ডারি ওয়াল না থাকার ফলে চালু করা হয়নি।

তিনি আরও জানান, ছাত্রীনিবাসটির বাইন্ডারি ওয়াল, নিরাপত্তা প্রহরী এবং হোস্টেল সুপার নিয়োগের জন্য একাধিক বার ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হলেও অদ্যবদি তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই এই সমস্যা দ্রুত নিরসন করা হলে ছাত্রীনিবাসটি চালু করা হবে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্ণফুলী সরকারি কলেজের কয়েকজন ছাত্রী জানান, এই কলেজে অধিকাংশ গরীব পরিবারের সন্তান লেখাপড়া করে। বিশেষ করে কাপ্তাই এবং বিলাইছড়ি উপজেলার বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে এই কলেজে অনেক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতে আসে। তবে শিক্ষার্থীদের বাসা-বাড়িগুলো অনেক দূরে হওয়ায় নিয়মিত যাতায়াত করা সম্ভব হয়না। তাই অনেক শিক্ষার্থী কলেজ এলাকার আশেপাশে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে লেখাপড়ার পাশাপাশি বাসাভাড়া এবং দৈনিক খাবার খরচেই অনেক টাকা ব্যয় হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের।

অধিকাংশ শিক্ষার্থী বলেন, কলেজের এই ছাত্রীনিবাসটিতে থাকার মতো পরিবেশ তৈরি করা হলে অনেক গরীব ও অসহায় শিক্ষার্থী এখানে থাকার সুযোগ পাবে। এতে তাদের অনেক উপকার হবে।

প্রসঙ্গত, কর্ণফুলী সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে প্রায় ২ হাজার ১শত ৬৬ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। তার মধ্যে কাপ্তাই উপজেলা ছাড়াও পাশ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চল থেকে অনেক শিক্ষার্থী কলেজটিতে লেখাপড়া করতে আসেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।