উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত চবি

শত ব্যস্ততাকে ফেলে রেখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ছুটে এসেছেন তাদের প্রাণের ক্যাম্পাসে। একটি দিনের জন্য হলেও সকলে ফিরে পেয়েছেন যৌবনের কাটানো সোনালী মুহূর্তগুলোকে। দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাস জীবনের বন্ধু বান্ধবী কিংবা সিনিয়র, জুনিয়রকে কাছে পেয়ে তারা আড্ডায় মেতে উঠেছেন, একসাথে কফি খাচ্ছেন, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে পুরনো স্মৃতিগুলোকে রোমন্থন করছেন, গান গাইছেন, কেউবা স্ত্রী সন্তানকে স্মৃতিময় জায়গাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছেন । দীর্ঘদিন আগে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে চলে যাওয়া ক্যাম্পাসের যে পরিবর্তন তা আগ্রহের সাথে দেখছেন আর ক্যামেরাবন্দি করছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ৩য় পুনর্মিলনীর চিত্র এটি। বিভাগটির প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (কিউবা) উদ্যোগে অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়।

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর ) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে বর্ণাঢ্য র‍্যালির মাধমে শুরু হয় পুনর্মিলনীর আনুষ্ঠানিকতা। র‍্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটা পাহাড় সড়ক হয়ে শহীদ মিনার ও জয় বাংলা চত্বর প্রদক্ষিণ করে উদ্ভিদ উদ্যানে শেষ হয়। এরপর উদ্ভিদ উদ্যানে শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল পর্ব।

কথা হয় পুনর্মিলনীতে আসা চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহর সাথে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর আমার প্রাণের ক্যাম্পাসে এসেছি। এ ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণায় আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে যেগুলো আমাকে বারবার কাছে ডেকে আনে । বন্ধুদের সাথে অনেকদিন পর একসাথে হতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। এর আগে আরো দুইটি পুনর্মিলন শহরে হলেও আজকে আমাদের নিজস্ব উদ্যানে হাওয়ায় আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।

২২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ বলেন, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী ছিলাম পরে সে বিভাগের চেয়ারম্যানও হয়েছি যা আমার জন্য সৌভাগ্যের। দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের সাথে একত্রিত হতে পেরে আমরা খুব আনন্দিত। সব বন্ধুরা বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হলেও এমন আনন্দঘন একটি প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য শত ব্যস্ততা ত্যাগ করে ছুটে এসেছি। আশা করি যাতে প্রতি বছর এমন প্রোগ্রাম হয়।

তিনি বর্তমান শিক্ষার্থীর দের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের ছোট ভাইদের যেকোনো সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করব। ডিপার্টমেন্টের উন্নয়ন,গবেষণা এবং পেশাগত জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে তাদের আমরা পরামর্শ সহ কারো আর্থিক সাহায্য লাগলে সেটাও আমরা দেওয়ার চেষ্টা করব।

২৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী যশ্বস্বী চাকমা বলেন, আজ খুব সকালে আমি এবং আমার বোন ক্যাম্পাসে চলে এসেছি। আমার বন্ধুদের সাথে দেখা করার একটা আগ্রহ কাজ করছিল। আজ আমাদের ব্যাচের ১৭ জন মতো উপস্থিত হয়েছি সুন্দর একটা দিন কাটালাম। আমাদের ব্যাচের একটা মেসেঞ্জার গ্রুপ আছে যেখানে আমরা বন্ধুদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করি খুব ভালো লাগে।
পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কাটানো সকল মুহূর্তই আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। বন্ধুদের সাথে শিক্ষকদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো খুব মিস করি। বিশেষ করে ট্যুরের স্মৃতিগুলো আজও আমার মনে নাড়া দেয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান এলামনাই এসোসিয়েশন (কিউবা) আয়োজিত এ পুনর্মিলনী উপলক্ষে একটি সেমিনার ও একটি আলোচনা সভাও আয়োজিত হয়। কিউবার সভাপতি সিনিয়র সচিব (পিআরএল) এন.এম রিজাউল আলমের সভাপতিত্বে আয়োজিত হয়ে সেমানার ও আলোচনা সভা। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারহানা রুমঝুম ভুঁইয়া, কিউবার সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন আরিফ ও জুলিয়া জেসমিন মিলি।

আইসিটি মন্ত্রণালয় ও কিউবার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সেমিনারে ‘4IR Application in Botanical Studies for Smart Bangladesh’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত সচিব (পিআরএল) ড. মো. আব্দুল মান্নান। এছাড়া Biotechnology: A Tool for Free Lifting Smart Bangladesh’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসাইন।

আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আক্তার। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা সবুজ বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সকল ক্লান্তি দূর করে দেয়। আজ যে সৌন্দর্য দেখতে পাচ্ছি সেটা করেছিলেন অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর মো. আব্দুল আজিজ খান। তাকে স্মরণীয় করে রাখতে তার নামে একটি চেয়ার স্থাপন করতে চাই। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব দিবেন। আমরা চলতি বছরের মধ্যেই একটি চেয়ার স্থাপন করব। এজন্য তিনি এ্যলামনাই এসোসিয়েশনের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. তৈহিদ হোসাইন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দিন। আহবায়কের বক্তব্য রাখেন ৩য় পুনর্মিলনী উদযাপন পরিষদের আহবায়ক শাহ মো. মোশাররফ হোসাইন। এছাড়াও বিভাগটির অন্যান্য শিক্ষকরাও এতে বক্তব্য রাখেন

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।