উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করবে চুয়েট ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে গবেষণা বা থিসিস করতে হয়। কিন্তু এসব গবেষণা বাস্তবতার মুখ দেখে না। ফলে অনেক সম্ভাবনাময় ধারণা ও উদ্ভাবন আড়ালেই থেকে যায়।

তবে এবার লাগব হবে সে সমস্যার। দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) স্থাপিত হয়েছে ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আইডিয়াগুলোকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে। যা ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে পথ তৈরি করে দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, বিশ্বের খ্যাতনামা হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, এমআইটির মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা ও উদ্ভাবনের পেছনে রয়েছে শিল্পের চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা প্রদান ও আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। যেখানে শিক্ষার্থীদের আইডিয়া ও উদ্ভাবনী ধারণাকে ইনকিউবেট করার সুযোগ করে দেওয়ার ফলে বড় বড় উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে, যা জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির প্রসার ঘটিয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই চুয়েটে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করেছে সরকার।

চুয়েট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রায় ৫ একর (৪.৭ একর) জমির ওপর নির্মিত হয়েছে ৫০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১০ তলাবিশিষ্ট এই ইনকিউবেশন ভবন। এছাড়া ৩৬ হাজার বর্গফুটের ৬ তলাবিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে শুরু করে ২০২২ এর জুন পর্যন্ত নির্ধারিত মেয়াদেই ইউনিক এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ১১৭ কোটি ৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও ১১৩ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকায় সমুদয় কাজ শেষ করেন সংশ্লিষ্টরা। বাকি ৩ কোটি ২২ লক্ষ টাকা সাশ্রয় করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়।

যা থাকছে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরে:
ইনকিউবেশন ভবনের মধ্যে রয়েছে— স্টার্টআপ জোন, আইডিয়া জোন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিক জোন, ব্রেইনস্ট্রর্মিং জোন, ই-লাইব্রেরি, ডাটা সেন্টার, রিসার্চ ল্যাব, বঙ্গবন্ধু কর্ণার, প্রদর্শনী সেন্টার, ভিডিও কনফারেন্সিং কক্ষ, সভাকক্ষ প্রভৃতি। উদ্যোক্তা ও গবেষকদের কাজের সুবিধার্থে একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাব, একটি মেশিন লার্নিং ল্যাব, একটি বিগ ডাটা ল্যাব, অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাকবোন, একটি সাব-স্টেশন ও সোলার প্যানেল রয়েছে। এছাড়া ব্যাংক ও আইটি ফার্মের জন্য পৃথক কর্ণার, অত্যাধুনিক সাইবার ক্যাফে, ফুড কোর্ট, ক্যাফেটেরিয়া, রিক্রিয়েশন জোন, মেকার স্পেস, ডিসপ্লে জোন, মিডিয়া কাভারেজ জোন, নিজস্ব পার্কিং সুবিধা প্রভৃতি।

অন্যদিকে মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবনে ২৫০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সুসজ্জিত অডিটোরিয়াম এবং ৩০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন পৃথক ৮টি কম্পিউটার ল্যাব কাম সেমিনার কক্ষ রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি ২০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ৪ তলাবিশিষ্ট পৃথক দুইটি (১টি নারী ও ১টি পুরুষ) আবাসিক ডরমিটরি ভবন নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি ডরমিটরিতে ৪০টি কক্ষ রয়েছে। এছাড়া দুুটি মিনি সুপার কম্পিউটার সম্বলিত অত্যাধুনিক গবেষণা ল্যাব শীঘ্রই স্থাপিত হতে যাচ্ছে।

যা বলছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা:
চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের পরিচালক এবং চুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এম মশিউল হক বলেন, এই আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর বিভিন্ন কোম্পানির সাথে শিক্ষার্থীদের নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে। উদ্যোক্তা এবং ব্যবসার জন্য সম্পূর্ণ ইকো-সিস্টেম রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা প্রদান; বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইটি শিল্পের মধ্যে কার্যকর সংযোগ স্থাপন করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে সুযোগ সৃষ্টি করা এবং ভৌত অবকাঠামো তৈরিতে এ আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।

এদিকে প্রকল্পটি নিয়ে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই শিক্ষার্থীদেরও। প্রথমবারের মতো ক্যম্পাসে এমন প্রতিষ্ঠানের সূচনায় নিজেদের গর্বের বিষয়টিও এড়িয়ে যাচ্ছেন না তারা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আইডিয়াগুলো বাস্তবায়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। যা নতুন নতুন আইডিয়া সৃষ্টিতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। তাছাড়া এটি শিক্ষার্থীদের দক্ষতারও বিকাশ ঘটাবে বলে মনে করছেন তারা।

প্রসঙ্গত, বুধবার (৬ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ‘চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ উদ্বোধন করার মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিয়ার মাঝে একটা সেতু বন্ধন সৃষ্টি হচ্ছে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। চুয়েটের এই উদ্যোগটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।