একই ভবনে বিদ্যালয়-পুলিশ ফাঁড়ি, আতঙ্কিত শিশু শিক্ষার্থীরা

ভোরের আলো ফুটতেই মনের আনন্দে স্কুলে যাওয়ার কথা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। বিদ্যালয়ে এসে পাড়াশোনা এবং এর আগে বা পরে খেলাধুলায় মেতে উঠে তারা—এটাই স্বাভাবিক চিত্র। কিন্তু পড়াশোনা বা খেলাধুলা কোনোটাই স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারছে না চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পরৈকোড়া ইউনিয়নের পূর্ব কন্যারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কারণ, তাদের বিদ্যালয়ের ভবনের তৃতীয় তলায় পুলিশ ফাঁড়ি। পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম চলায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভয়ে থাকেন। প্রায় ২৮ বছর ধরে এভাবেই চলছে বিদ্যালয়টির পাঠ্য কার্যক্রম।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে বিদ্যালয় ও তৃতীয় তলায় পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ৩ তলা বিশিষ্ট বিদ্যালয় ভবনটি সাইক্লোন শেল্টারের নিচতলা খালি, দ্বিতীয় তলার চারটি কক্ষের মধ্যে একটি অফিস, তিনটি শ্রেণিকক্ষ। ভবনের বারান্দায় বসে চলছে একটি শ্রেণির কার্যক্রম, তৃতীয় তলার সবকক্ষে আছেন পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ে ১৫৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রাক–প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান দিতে চারটি শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন, শিক্ষকদের জন্য একটি কক্ষ, প্রধান শিক্ষকের জন্য একটি কক্ষ ও একটি ভান্ডারকক্ষ প্রয়োজন। কিন্তু বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলায় পুলিশ ফাঁড়ির দখলে থাকায় দ্বিতীয় তলার চারটি কক্ষে সব কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।

জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব কন্যারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে ১৯৯৩ সালে সৌদি সরকারের আর্থিক অনুদানে তিনতলা বিশিষ্ট বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারের একটি ভবন নির্মিত হয়। ১৯৯৫ সালে এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলা দখল করে শুরু হয় পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম।

পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আর্জি প্রতিজ্ঞা অখন্ড বলেন, পুলিশের ভয়ে আমাদের স্কুলে আসতে ইচ্ছে করে না। একই শ্রেণীর অন্তিমা ঘোষ বলে, অনেক সময় পুলিশ সদস্যরা তাদের খাবারের ময়লা পানি ফেলে আমাদের স্কুলের পোষাক পর্যন্ত নষ্ট করে দেয়। তাদের ভয়ে আমার ছোটভাই শিশু শ্রেণীতে পড়ে, সেও স্কুলে আসে না।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে তৃতীয় তলার পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা কথা বলতে রাজি হননি এবং ছবি তুলতেও বাধা দেন। তাই তাদের কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রুমাশ্রী মল্লিক বলেন, পুলিশ অপরাধীদের ধরে আনার সময় খারাপ আচরণ করতে আমরা দেখি। যা দেখে শিশুরা ভয় পায়। এতে বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে। এমন পরিবেশে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পাঠদানে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও শ্রেণীকক্ষ সংকট থাকায় বারান্দায় ক্লাস নিতে হচ্ছে এবং বিদ্যালয়ের আসবাপত্রগুলো নস্ট হয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয় ভবন থেকে পুলিশ ফাঁড়ি সরিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা ইতিমধ্যে শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। এভাবে একই ভবনে পুলিশ ফাঁড়ি ও স্কুলের কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা নিরুপায়। এলাকার অনেক সচেতন অভিভাবক তাদের সন্তানদের আমাদের স্কুলে ভর্তি করান না।

আনোয়ারা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, বিদ্যালয় ভবনে পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম চালানোর কারণে শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি মানসিক সমস্যাও হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে থাকে, পুলিশ ফাঁড়ি সরিয়ে নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

স্থানীয় চেয়ারম্যান আজিজুল হক চৌধুরী বাবুল বলেন, আমার ইউনিয়নে পরিত্যাক্ত একটি সরকারি ভবন রয়েছে। ভবনটি সংস্কার করে বিদ্যালয়ের ভবনে থেকে পুলিশ ফাঁড়িটি সরিয়ে আনার জন্য মিটিং প্রস্তাব দিয়েছিলাম। উপজেলা প্রশাসন আ্বিাস দিয়েছে সরেজমিনে পরিশর্দনে এসে এটির ব্যবস্থা নিবেন।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুরা পুলিশের ভয়েও স্কুলে আসতে চাচ্ছেন না বলেও আমাদেরকে অভিভাবকরা জানিয়েছে। এতে করে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

এ বিষয়ে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল আহমেদের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।