পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলার মাইনী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মিত হলেই দুর্ভোগ লাঘব হয়ে জীবন পাল্টে যাওয়ার আশা করছেন উপজেলার গুলশাখালী, বগাচতর, ভাসান্যাদম ও প্বাশবর্তী বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের একাংশের বাসিন্দারা। সেতুটি নির্মিত হলে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আসবে বলে জানিয়েছেন তারা। সেতুর অভাবে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বশর বলেন, জেলার বৃহত্তর মাইনী বাজারের পাশে অবস্থিত কাচাংল নদীর অববাহিকা মাইনী নদী। নদীর পূর্বপাড়ে উপজেলার আরও ৩টি ইউনিয়ন এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলী ইউনিয়নসহ শতাধিক গ্রামের অবস্থান। মাইনী নদীর ওপর সেতু না থাকায় বর্ষা মৌসুমে এসব গ্রামের মানুষ এক রকম বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করেন। গত কয়েক বছরে নদী পার হতে গিয়ে ছোট-বড় অনেক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে নারী-পুরুষ ও শিশুরা। এছাড়া বর্ষাকালে নদীতে পানি বেশি থাকায় কৃষকেরা তাদের ক্ষেতে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারেন না। স্কুল-কলেজ-হাটবাজার-হাসপাতালসহ অন্যান্য সকল গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান নদীর ওপারে অবস্থিত হওয়ায় এসব গ্রামবাসীর ভোগান্তি লেগেই থাকে। মাইনী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মিত হলে উপজেলার সাথে পিছিয়ে পড়া ৩টি ইউনিয়নের দূরত্ব কমে আসবে। ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি কৃষকসহ সুবিধাবঞ্চিত ইউনিয়নের লাখো বাসিন্দা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
উপজেলার গাউসপুর গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় যেতে এখন সময় প্রায় ঘন্টা খানেক। কিন্তু সেতুটি নির্মিত হতে ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে পোঁছা সম্ভব হবে। মো. হারুনুর রশিদ নামের আরেক এলাকাবাসী বলেন, যোগাযোগে অনেক সমস্যা। কোনও লোক অসুস্থ হলে সময় মতো তাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া যায় না।
গুলশাখালী ইউনিয়নের কাকপাড়ীয়া এলাকার মো. খোরশেদ আলম বলেন, প্রতি বছর নদী পেরোতে গিয়ে কেউ না কেউ দুর্ঘটনায় পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এক বৃদ্ধ নৌকা থেকে পড়ে আহত হয়েছেন। বছরের পর বছর আহত-প্রাণহানি যেমন হচ্ছে তেমনি সম্পদহানিও হচ্ছে। তার পরেও কেউ আমাদের যন্ত্রণা বোঝে না।
ভাসান্যাদম ইউনিয়নের রাঙ্গাপানিছড়া এলাকার কৃষক মো. আবুল হোসেন বলেন, সেতু না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা যেমন ভুগছে, তেমনি ভুগছে কৃষকেরা। তারা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য সময়মতো ও ঠিকমতো বিক্রি করতে পারছেন না। অনেক সময় উৎপাদিত পণ্য ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। মাইনী বাজারের পাশে নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হলে উপজেলার সঙ্গে প্রতিটি ইউনিয়নের যোগাযোগ সহজ হলে এসব সমস্যা থাকবে না বলেই আমাদের আশা।
লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসীর দুঃখ, দুর্ভোগের বিষয়ে আমি অবগত আছি। মাইনী নদীর ওপর এই সেতু নির্মিত হলে এলাকাবাসী উপকৃত হবে, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। এই বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীসহ স্থানীয় সরকার বিভাগের সাথে কথা বলবো।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।