দেশের অল্প আয়ের মানুষের জন্য আমিষের সহজলভ্য উৎস ডিম। ডিমকে বলা হয় পরিপূর্ণ খাদ্য। সারা পৃথিবীতে মাত্র কয়েকটি খাদ্যকে সুপার ফুড হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ডিম অন্যতম। গত এক দশকে ডিমের উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ডিম উৎপাদিত হয়েছে ৭ কোটি ৬১ লাখ ৭৪ হাজার। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ডিম উৎপাদিত হয়েছে ২৩ কোটি ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার। এক দশকে বছরে ডিমের উৎপাদন বেড়েছে ১৫ কোটি ৭৩ লাখ ০৬ হাজার। অর্থাৎ এক দশকে ডিমের উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ।
পুষ্টিবিদরা জানান, একটি ডিমে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন, ৫ গ্রাম উন্নত ফ্যাটি এসিড, ৭০-৭৭ কিলোক্যালরি শক্তি, ১০০-১৪০ মিলিগ্রাম কোলিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপকরণ থাকে। এছাড়াও ডিমে থাকা লিউটিন ও জেক্সানথিন চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ডিমে থাকা ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন হৃদরোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। এছাড়া ডিমের কুসুমে বিদ্যমান এন্টিবডিসমূহ ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল রোগ প্রতিরোধ করে।
ডিমের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় ও এর পুষ্টিমান শিশুদের মেধা বিকাশে সহায়তা করে। ডিম গর্ভবতীদের পুষ্টি নিশ্চিত করে ও ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করে, নিয়মিত ডিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়া ডিমে প্রাপ্ত ভিটামিন-এ চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, ডিম ওজন কমাতে সহায়ক এবং ডিম টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, সারা বিশ্বেই সকালবেলার নাশতায় ডিম খাওয়ার কথা বলা হয়। ডিমের মধ্যে ভরপুর রয়েছে প্রোটিন। আর অন্যান্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের তুলনায় এর দামও কম। ডিম অনেক পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি খাবার। ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড। এ ছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি৫, বি১২, বি৬, ডি, ই, কে, ফোলেট, ফসফরাস, ক্যালিয়াম ও জিংক।
প্রতিটি ডিমের মধ্যে রয়েছে পাঁচ গ্রাম প্রোটিন। যদি কোনো গর্ভবতী মহিলা যদি প্রতিদিন দুটি করে ডিম খান তাহলে তার অনাগত শিশু হবে মেধাবী। কারণ ডিম রয়েছে কোলিন নামের একটি উপাদান। এটি শিশুর মস্তিস্কের বিকাশে সহায়তা করে। বেশিরভাগই খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ কোলিন রাখে না। ডিমে যেহেতু ভালো পরিমাণ কোলিন রয়েছে, তাই এটি ডিমের মধ্যে রয়েছে জিঙানথিন ও লুটেইন নামক অ্যান্টিঅঙিডেন্ট। এটি চোখের জন্য ভালো। এ ছাড়া এটি ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করে। ডিমের মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও ভালো চর্বি। অনেকে ভাবেন, সব চর্বিই খারাপ। তবে কথাটি সঠিক নয়। স্বাস্থ্যকর চর্বিও রয়েছে। এটি শরীরের জন্য ভালো। আবার ডিম মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
চট্টগ্রামে কর্মসূচি :
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা বিশ্ব ডিম দিবস পালন করতে যাচ্ছি। দিবসটি উপলক্ষে এবারের প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে ‘উন্নত জীবনের জন্য ডিম’। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিভাগীয় প্রাণীসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ড. একেএম হুমায়ুন করিব। এছাড়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী।
এছাড়া বিশেষ অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, সিভাসুর ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, সিভাসুর ফুড সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আশরাফ আলী বিশ্বাস।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।