এনএসআই কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা—মমতাজ ও তার স্বামী গ্রেপ্তার

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা—এনএসআই’র উপ-পরিচালক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জনকে চাকুরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতানোর অভিযোগে মমতাজ বেগম ও তার স্বামী মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। মুজিব চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানাধীন প্রেমতলা কলেজ রোড এলাকার সামছুরজ্জামানের ছেলে।

শুক্রবার (২৪ মে) র‌্যাবের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়। তাদেরকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতারক স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তারে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সর্বাত্মকভাবে র‍্যাবের আভিযানিক দলকে সহায়তা করে।

র‌্যাব জানায়—প্রতারকরা মুঞ্জুর আলম নামের এক যুবককে এনএসআই’র ফিল্ড অফিসার পদে চাকুরী লাভের প্রলোভন দেখায়। প্রলোভনে আকৃষ্ট হওয়া চাকুরী প্রত্যাশী মুঞ্জুর আলমকে মমতাজ বেগম ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে এনএসআই এর ফিল্ড অফিসার পদে চাকুরী দিবে বলে আশ্বস্ত করে।
১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে এনএসআই এর ফিল্ড অফিসার পদে চাকুরী লাভের বিষয়টি ভিকটিম মুঞ্জুর আলম অপর চাকুরী প্রত্যাশী তার বোন জামাই, মামা এবং বন্ধুকে জানালে তারা সকলে চাকুরীর জন্য মমতাজ বেগমের বাড়িতে যায় এবং মমতাজ বেগমের স্বামী মুজিবুর রহমান তাদের সবাইকে চাকুরী দিতে পারবে বলে পুনরায় আশ্বস্ত করে।

মুজিব-মমতাজের আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর চাকুরী প্রত্যাশী ভিকটিম মুঞ্জুর আলম ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, তার মামা একরাম হোসেন ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, তার বন্ধু নয়ন ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা এবং তার বোন জামাই ১২ লক্ষ টাকা সহ সর্বমোট ৩৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা মমতাজ বেগমকে প্রদান করে। উক্ত টাকার সিকিউরিটি হিসেবে ষ্ট্যাম্পে প্রতারকরা লিখিত অঙ্গীকারনামা প্রদান করে এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার ৫টি চেক প্রদান করে।

দীর্ঘ ২ বছর ৬ মাস পর এনএসআই এর সার্কুলার হলেও মমতাজ বেগম তাদেরকে চাকুরী দিতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে খোঁজ খবর নিয়ে তারা জানতে পারেন যে মমতাজ বেগম এনএসআইয়ের উপ-পরিচালক পদে কখনোই চাকুরী করেনি এবং সে সরকারি কর্মকর্তার মিথ্যা পরিচয় দিয়ে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে ভুক্তভোগী ভিকটিমদের নিকট থেকে অর্থ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যেই প্রতারণামূলকভাবে ৩৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে চাকুরী প্রত্যাশীরা টাকা ফেরত চাইলে মমতাজ বেগম ও তার স্বামী তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করে।

চাকুরী প্রত্যাশী ভিকটিমরা র‌্যাব-৭ বরাবর লিখিত আবেদন করেন। উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে সত্যতা পেয়ে র‌্যাব ও এনএসআই যৌথ অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে। এসময় তাদের ঘর থেকে ৯৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট করে এবং আসামীর প্রতারণার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল ডকুমেন্টও জব্দ করে।

র‌্যাব আরও জানায়, আটককৃত আসামি মুজিবুর রহমান স্বীকার করে, সে তার স্ত্রী মমতাজ বেগমকে এনএসআইয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে পরস্পর যোগসাজশে চাকুরী প্রার্থীদের চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন লোকজনদের নিকট থেকে টাকা গ্রহণ করে আত্মসাৎ করে আসছে। এছাড়া মমতাজ বেগম দীর্ঘদিন যাবৎ মাদকদ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেট বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে খুচরা বিক্রয় করে আসছিল মর্মে স্বীকার করে।

পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আসামিদেরকে সীতাকুন্ড থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।