ডা. মো. বাবর আলী—চট্টগ্রামের সন্তান, চট্টগ্রামের হালদা পাড়ের সন্তান, বাংলাদেশের গর্ব। রোববার (১৯ মে) সকাল সাড়ে ৮টায় পৃথিবীর সর্বোচ্চ উঁচু স্থান মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেছে বাবর।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডা. বাবর আলীর এভারেস্ট অভিযানের সমন্বয়ে ফরহান জামান। ৫ম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি এভারেস্ট বিজয় করেন। সর্বোচ্চ চূড়া থেকে নেমে ক্যাম্পে ফিরে তিনি লোৎসে অভিযানে যাবেন।
স্বপ্ন জয়ে ১ এপ্রিল দেশ ছাড়া বাবর আলী শনিবার (১৮ মে) দিবাগত রাতে ৭ হাজার ৯০০ মিটার উঁচুর ক্যাম্প-৪ থেকে এভারেস্ট শিখরের পথে যাত্রা করেন।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুডিশ্বচরে জন্ম নেওয়া এই তরুণ পেশায় একজন চিকিৎসক। নানা স্বেচ্ছাসেবী কাজে তার সুনাম রয়েছে। করোনায় তার ভূমিকাও বেশ প্রশংসার ছিল। সব কিছুকে পিছনে রেখে পাহাড় প্রেমী হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন চট্টগ্রাম মেডিকেলে কলেজের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. বাবর আলী।
২০১৪ সালেই ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত নেপালে এক হিমালয় অভিযানে বাবর সামিট করেন এক পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতার পর্বত। সেই তার হিমালয়ে পথচলা শুরু। এরপর পর্বতারোহণের বিশুদ্ধতম ধরণ বলে পরিচিত আল্পাইন স্টাইলে ২০১৬ সালে ক্লাব থেকে সামিট হয় ভারতের মাউন্ট ইয়ানাম, যা ছিল বাংলাদেশ থেকে প্রথমবার কোন ২০ হাজার ফুট উচ্চতার পর্বত সামিট এবং সেই দলের সদস্য ছিলেন তিনি।
পর্বতারোহণকে ধ্যানজ্ঞান মেনে তিনি বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স করেন ভারতের নেহেরু ইন্সটিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং থেকে। ২০১৪ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছর করেছেন এক বা একাধিক হিমালয় অভিযান। এছাড়াও নিজেকে উপযুক্ত করে তুলতে বাবর নিয়মিত দৌঁড়ান, করেছেন ক্রস কান্ট্রি সাইক্লিং, করেন কায়াকিং, পায়ে হেঁটে টানা ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেছেন সিঙ্গেল ইজার প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে।
২০২৩ সালে তিনি ভারতের সর্ব উত্তরের কাশ্মীর থেকে সর্ব দক্ষিণের বিন্দু কন্যাকুমারী পর্যন্ত সাইকেল চালিয়েছেন।
অভিযানের সমন্বয়ক ফরহান জামান জানান, মাউন্ট এভারেস্টে অভিযান নিঃসন্দেহে দুরুহ একটা কাজ। আজ সেটি সম্পন্ন করে বাবর ২৭ হাজার ৯৪০ ফুট উচ্চতার মাউন্ট লোৎসে আরোহণে যাত্রা করবেন। বাংলাদেশ থেকে আগে এভারেস্ট আরোহণ হলেও একই অভিযানে এভারেস্ট এবং লোৎসে আরোহণের চেষ্টা হয়নি পূর্বে। সেই চ্যালেঞ্জই নিয়েছেন গত বেশ কয়েক বছর ধরে নিজেকে হিমালয়ের নানান চূড়ায় অভিযানের জন্য প্রস্তুত করা বাবর।
এই অভিযানে মোট খরচ হচ্ছে ৪৫ লক্ষ টাকা। যাতে মূল পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছেন ভিজ্যুয়াল নীটওয়্যার লিমিটেড। এছাড়া সহ-পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ঢাকা ডাইর্ভাস ক্লাব, বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ব্লু জে, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী, গিরি, ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স।
এছাড়াও অভিযানের জন্য গণ তহবিল সংগ্রহে অংশ নিয়েছেন দেশ-বিদেশের নানা সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠন এবং অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী। অভিযানের সার্বিক সমন্বয় করেছে ডা. বাবর আলীর নিজের ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।