কক্সবাজারে ধর্ষণকাণ্ডের হোতা আশিক র‌্যাবের জালে

স্বীকার করেছেন ধর্ষণ ও চাঁদা দাবির বিষয়টিও

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে এক নারীকে ধর্ষণে প্রধান অভিযুক্ত আশিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে রাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব। আশিকের বিরুদ্ধে কক্সবাজারে নারী নির্যাতন, ইয়াবা ও অস্ত্রসহ ১৭টি মামলা রয়েছে।

রোববার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তাকে মাদারীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে র‍্যাব জানিয়েছে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ধর্ষণের ঘটনার পর টর্নেডো আশিক দাড়ি-গোফ কেটে চেহারা বদলে কক্সবাজার ছাড়েন। ঘটনার পর পর গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশ হওয়ায় আশিক দাড়ি-গোফ কেটে, ভ্রু প্লাক করে কক্সবাজার থেকে এসি বাসে প্রথমে ঢাকায় আসে। পরে আরেকটি বাসে মাদারীপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় যায়। সেখান থেকে কুয়াকাটায় গিয়ে আত্মগোপনের পরিকল্পনা ছিল তার। তবে কুয়াকাটা যাওয়ার চেষ্টাকালে রোববার রাতে মাদারীপুরের মোস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আশিক তরুণীকে ধর্ষণ ও তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়ার কথা স্বীকার করেছে বলেও জানান খন্দকার আল মঈন।

গত বুধবার সন্ধ্যায় সংঘবদ্ধ একটি চক্র কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে ও হত্যার হুমকি দিয়ে ২৫ বছর বয়সী এক নারী পর্যটককে তুলে নিয়ে কয়েক দফা ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ করা হয়।

গভীর রাতে খবর পেয়ে কক্সবাজারে শহরের জিয়া গেস্ট ইন থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে র‌্যাব। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন— আশিকুর রহমান ও তার তিন সহযোগী ইস্রাফিল খোদা ওরফে জয়া ও মেহেদী হাসান ওরফে বাবু এবং হোটেল ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটন। আসামিদের মধ্যে জিয়া গেস্ট ইনের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়— বুধবার সকালে কক্সবাজারে পৌঁছে হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে ওঠেন তারা। বিকালে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে মার্কেটে ভিড়ের মধ্যে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে সন্ধ্যার দিকে পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার শিশুসন্তান ও স্বামীকে অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন যুবক। আর তিন যুবক আরেকটি অটোরিকশায় করে ওই নারীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গলফ মাঠের পেছনে নির্জন স্থানে ধর্ষণ করে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, তিন যুবক তাকে দ্বিতীয় দফায় জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে নিয়ে আটকে রেখে আরেক দফা ধর্ষণ করে। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে বাইরে থেকে রুম আটকে চলে যায় ওই তিন যুবক। পরে হোটেলের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে ডেকে এক ব্যক্তির সহায়তায় কক্ষ থেকে বের হন ওই নারী। স্থানীয়দের সহায়তায় ফোন করে র‌্যাবে অভিযাগ জানান। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে র‌্যাব। আর তার স্বামী ও সন্তানকে উদ্ধার করা হয় পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে।

ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগ, এ বিষয়ে পুলিশের জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে তিনি কোনো সহায়তা পাননি। পুলিশের এসআই পদের এক সদস্য তাকে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

ঘটনার পর থেকে স্থানীয় পুলিশ অভিযুক্ত আসামিদের ধরতে পারেনি। এজাহারভুক্ত দুই আসামিকেই গ্রেপ্তার করলো র‌্যাব। পুলিশ যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে তাদের কারও নাম নেই মামলার এজাহারে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।