কক্সবাজার আদালতে প্রবেশন আদেশের অনন্য নজীর

কক্সবাজারের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অপরাধী আসামিকে সংশোধনের সাজা দিয়ে এক অনন্য নজীর স্থাপন করেছেন। আদালত রায়ে অভিযুক্ত নুরুল আলমকে ১০০টি বৃক্ষ রোপন, রোপিত বৃক্ষ পরবর্তী ২ বছর পরিচর্যাসহ ১৫টি শর্ত প্রদান করেছেন। 

বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) ব্যতিক্রমী এ রায় প্রদান করেন কক্সবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী। রায়ে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় একই মামলার আরও পাঁচ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজার দরগাহপাড়ার মৃত নবী হোছনের ছেলে মো. নুরুল হক দণ্ডিত নুরুল আলমসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারী দন্ডবিধি ৪৪৭, ৩২৩, ৩২৪, ৩০৭, ৩৭৯, ৫০৬ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ এনে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

প্রায় তিন বছর মামলার বিচার কাজ চলে। এই সময়ে মামলার বাদী, ভিকটিম, তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এবং চিকিৎসকসহ ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। অবশেষে জেরা যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হলে আদালত উক্ত রায় প্রদান করেন।

রায়ে বিচারকের দেওয়া প্রবেশন আদেশের ১৫টি শর্ত হচ্ছে-
০১. বিচারক কর্তৃক নিযুক্ত প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে আসামি নিজেকে সমর্পণ করতে হবে।
০২. আসামি বাসস্থান এবং জীবিকার উপায় সম্পর্কে প্রবেশন অফিসারকে নিয়মিত অবহিত রাখতে হবে।
০৩. সৎ ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন এবং সদোপায়ে জীবিকা অর্জনের জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে।
০৪. বিচারক/আদালত কর্তৃক তলব করা হলে তদানুসারে হাজির হয়ে দন্ড ভোগ করতে বাধ্য থাকতে হবে।
০৫. সময় সময় প্রবেশন অফিসার কর্তৃক প্রদেয় আইনানুগ মৌখিক বা লিখিত উপদেশসমূহ মেনে চলতে হবে।
০৬. বিচারক/আদালতের অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশ ত্যাগ করা যাবে না।
০৭. দুশ্চরিত্র লোকের সাথে মেলামেশা করা যাবে না।
০৮. কোন প্রকার লাম্পট্য কাজে লিপ্ত হতে পারবে না।
০৯. দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য কোন প্রকার অপরাধ কর্মে লিপ্ত হওয়া যাবে না।
১০. স্বেচ্ছায় বা কারো প্ররোচনায় শান্তি ভঙ্গের কোন কাজে লিপ্ত অথবা অংশগ্রহণ করা যাবে না।
১১. কোন প্রকার মাদকদ্রব্য সেবন, বহন ও হেফাজতে রাখা যাবে না এবং কোন মাদকসেবী বা বহনকারী বা হেফাজতকারীর সাথে মেলামেশাও করা যাবে না।
১২. আসামিকে তাঁর ধর্মীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাসময়ে পালন করতে হবে।
১৩. আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ১০০টি বৃক্ষ রোপন করে প্রবেশন অফিসারের মাধ্যমে আদালতকে অবহিত করতে হবে।
১৪. উক্ত গাছগুলো পরবর্তী ২ বছর পরিচর্যা করতে হবে এবং
১৫. প্রতিমাসে একবার বাড়ীর পাশে সরকারি শিশু পরিবারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজকর্ম সম্পাদন করতে হবে।

এই রায়ের খবরে কক্সবাজার আদালত অঙ্গনের পাশাপাশি পর্যটন নগরীতে বেশ কৌতুহল সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্টরাএমন রায়কে প্রশংসনীয় উল্লেখ করে বলেন, পারস্পরিক সহনশীল সমাজ ব্যবস্থা গড়তে এমন রায় মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। 

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।