কর্ণফুলীতে হাতির আক্রমণে নিহত শিশুর লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ

মায়ের কোলে ঘুমন্ত শিশু, গভীর রাতেই হাতির কাছ থেকে বাঁচতে দৌঁড়ে নিরাপদস্থানে যেতেই শুঁড়ের আঘাতে প্রাণ হারায় ৭ মাসের শিশু মো. আরমান জাওয়াদ। হাতির আক্রমণে শিশুটির মা খজিমা বেগম (৩৭) গুরুতর আহত হাসপাতালের মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

হাতির তাণ্ডবে এমন মর্মান্তিক ঘটনায় শিশুটির লাশ নিয়ে শনিবার (২২ মার্চ) সকাল ৬টা থেকে উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের দৌলতপুর কেইপিজেড গেট এলাকায় সড়ক অবরোধ শুরু করেন ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী। এ কারণে সড়কটিতে দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে। দুপুর বারোটা পর্যন্ত অবরোধ তুলেনি ক্ষিপ্ত কয়েক হাজার এলাকাবাসী। প্রায় ৬ ঘন্টা যানচলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। কেইপিজেড এলাকা থেকে বন্য হাতিটি সরানোর দাবি জানান বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। অবরোধের কারণে সড়কের উভয় পাশে প্রায় দীর্ঘ আট কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।

নিহত আরমান জাওয়াদ ওই এলাকার মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ছেলে। এরআগে শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার বড়উঠানের শাহমীরপুর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের টেনরুলের বাপের বাড়ি এলাকায় বন্য হাতির আক্রমণে শুঁড়ের আঘাতে শিশুটির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দারা ও বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার রাতে একটি বন্য হাতি মোহাম্মদ ইব্রাহীমের টিনের ঘরে ভাঙচুর শুরু করলে তাঁর স্ত্রী খজিমা বেগম ঘুমন্ত শিশু জাওয়াদকে নিয়ে ঘর থেকে বের হন। এ সময় বন্য হাতির কাছ থেকে বাঁচতে দৌঁড়ে নিরাপদস্থানে যেতেই শুঁড়ের আঘাতে ৭ মাসের শিশু মো. আরমান জাওয়াদে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল আজিজ বলেন, হাতি তান্ডব থেকে ৭ মাসের শিশুকে নিয়ে ইব্রাহিমের স্ত্রী খজিমা বেগম ঘর থেকে বের হলে হাতির শুঁড়ের আঘাতে প্রাণ হারান শিশুটি। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কেইপিজেডের পাহাড়ে হাতি দলটি অবস্থান করলেও হাতি সরানোর কোনো পদক্ষেপই নেননি প্রশাসন বা কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াসিম আকরাম বলেন, কেইপিজেডে অবস্থানরত হাতিদলটি প্রতিরাতে আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর বিশেষ করে চারটি ইউনিয়নের লোকালয়ে হানা দেয়। এই পর্যন্ত দুই উপজেলার নারী-শিশুসহ ১৮ জন মানুষ মারা গেছে হাতির আক্রমণে। হাতিগুলো এখান থেকে সরিয়ে নিতে আমরা প্রশাসন ও বনবিভাগের লোকজনকে একাধিকবার স্মারকলিপি দিয়েছি। এতে তারা কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় আজ আবারও একশিশুকে আমরা হারালাম। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রশাসনের লোকজন হাতি সরানোর ব্যবস্থা করবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অবরোধ চলবে।

এদিকে কেইপিজেডের ভিতরে নিরাপত্তার জন্য গত অক্টোবর থেকে ১৫ জন ইআরটি সদস্য কাজ করছিল। গত ৮ মার্চ থেকে তারা ইআরটি সদস্যদের বাদ দিয়েছে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ। জানুয়ারী থেকে মার্চ পর্যন্ত বকেয়া রেখেছে তাদের বেতনও। তাদের বেতন পরিশোধ করতে একটি চিঠিও দিয়েছেন বাঁশখালী জলদি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ। চিঠিতে তিনি পরবর্তী কোনো জটিলতা সৃষ্টি হলে এর দায়-দায়িত্বও তাদেরকে নিতে হবে বলে জানিয়েছিলেন এ রেঞ্জ কর্মকর্তা।

বাঁশখালী জলদি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, কেইপিজেড পাহাড়া ইআরটি ১৫জন সদস্য দায়িত্ব পালন করতো। গত জানুয়ারী থেকে মার্চ পর্যন্ত কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ তাদের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে হাতির জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক তাদের রয়েছে। এছাড়াও আমাদের বনবিভাগের ৫০ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইআরটি সদস্য কাজ করছে প্রতিনিয়ত। শনিবারের ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গিয়েছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্ঠা করা হচ্ছে।

কেইপিজেডের এজিএম মুশফিকুর রহমান জানান, তাদের ভিতরে নিরাপত্তার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১০০ জন স্বেচ্ছসেবক রয়েছে। সে জন্য বনবিভাগের ১৫ জন ইআরটি সদস্যদের বাদ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা তাদের ৭ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা বেতন দিয়েছি।

কর্ণফুলী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) রয়া ত্রিপুরা বলেন, হাতি অপ্রসারণ ও ক্ষতিপূরণের জন্য বনবিভাগসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নিয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের সহয়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।