কর্ণফুলী নদী রক্ষায় সাম্পান র‌্যালি

কর্ণফুলী নদীকে দখলমুক্ত-দূষণমুক্ত রাখতে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো গত দুইদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে পালন করে আসছিল এসব নানা কর্মসূচি। নদীতে সাম্পান ভেসে চলেছে এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে। পাটাতনে রয়েছে আরোহী। কেউ সংস্কৃতিকর্মী, কেউ রাজনীতিক, কেউ সমাজকর্মী, কেউ শিক্ষক। আছেন সংবাদকর্মীও। বিশেষ এই সাম্পানের উদ্দেশ্য কর্ণফুলীর দখল-দূষণ ঠেকাতে সচেতনতা বাড়ানো। এজন্য এটি ঘাটে ঘাটে ভিড়ছে। আরোহীরা সাম্পানের সুদৃশ্য মঞ্চে মেতে উঠেছেন গান, কবিতা, নৃত্যে। এসব গানে রয়েছে সচেতনতার বার্তা। আছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, কর্ণফুলীর হারানো ঐশ্বর্য্যরে কথাও। গান গেয়ে তাঁরা সাধারণ মানুষকে শুধু সচেতন করছেন না, স্মৃতিকাতরও করছেন। তাদের লড়াইয়ের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সাধারণ মানুষও।

ব্যতিক্রমী এ শোভাযাত্রা দেখে লাইটার জাহাজ থেকে শুরু করে দুই পাড়ের হাজারো মানুষ হাত নেড়ে শুভ কামনা জানাল মাঝিদের। একাত্মতা প্রকাশ করলো তাদের দাবির প্রতি। এরআগে বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় অভয়মিত্র ঘাট থেকে শুরু হয় বিনিসূতার মালা। বড় ভাসমান মঞ্চে সদরঘাট থেকে চন্দ্রঘোনা পর্যন্ত পঞ্চাশ কিলোমিটার নদীর উত্তর তীরের ঘাট, হাট বাজারের মানুষ, নদী ব্যবহারকারীদের নদী দখল দূষণ মুক্ত রাখতে এবং নদীতে প্লাস্টিক বর্জ্যে না ফেলতে গানের মাধ্যমে সচেতন করেন শিল্পীরা।

শুক্রবার (৯ মে) সকালে কর্মসূচির দ্বিতীয়দিনে ঐতিহ্যবাহী সাম্পান শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ। এ সময় তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদী দখলে রাখা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।

চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান সাংবাদিক আলীউর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাংস্কৃতিক কর্মী দিলরুবা খানমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলী আব্বাস। অনুষ্ঠানে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ডা. গিয়াস উদ্দিন ফারুকী ফয়সাল, সাম্পান খেলা পরিচালনা পরিষদের আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার মীর্জা মো. ইসমাঈল, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সভাপতি এসএম পেয়ার আলীসহ সংস্কৃতিকর্মী, রাজনীতিক, সমাজকর্মী, শিক্ষক, সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

কর্ণফুলী নদী দখল-দূষণ নিয়ে কথা হয় সাম্পানের মাঝিরা বলেন, ‘নদীর পানি কালো হয়ে গেছে। নদীর তীরে নানা সময়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। এছাড়াও বিভিন্ন কল-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যরে দূষণে এ নদীর প্রাণ যায় যায়। নদী না বাঁচলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। কর্ণফুলী নদী বাঁচলে আমরাও বাঁচব, দেশও বাঁচবে।

আয়োজকরা জানান, কর্ণফুলীর পাড়ের প্রায় চার শরও বেশি কারখানার বর্জ্য, ১২শত বেশি খামারের বর্জ্যসহ এই শহরের প্রায় ৬০ লাখ মানুষের মানববর্জ্য এবং পলিথিন-প্লাস্টিক প্রতিদিন নদীতে পড়ে। বর্তমানে নদীর প্রায় সাত মিটার গভীরতা নষ্ট হয়ে গেছে শুধু পলিথিনের কারণে। দখল ও দূষণে বিপর্যস্ত চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এবং হালদা নদী রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর এ সাম্পান বাইচ প্রতিযোগিতা আয়োজন করে আয়োজকরা।

চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান সাংবাদিক আলীউর রহমান জানান, কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে হবে। কর্ণফুলী হলো দেশের অর্থনীতির হৃৎপিন্ড। অবৈধভাবে কর্ণফুলী নদীর তীর দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।