কর্ম গুণেই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক পিতা, মেয়ে হলেন সেরা শিক্ষার্থী

জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ -২০২৩ এ উপজেলা পর্যায়ে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছে করল্যাছড়ি আর.এস উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটির সিনিয়র শিক্ষক সুলতান আহমেদ এবং কলেজ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছেন লংগদু সরকারি মডেল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী সুমাইয়া বিনতে সুলতান স্বর্ণা। কর্ম গুনেই বাবা-মেয়ে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে।

বুধবার (১৭ মে) বিকেলে লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত শিক্ষা অফিসের প্রকাশিত ফলাফলে এ তথ্য নিশ্চিত হয়।

শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক গঠিত বাছাই কমিটি, প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান ও নিষ্ঠা, সৃজনশীল প্রকাশনাসহ নানাবিধ বিষয় বিবেচনা করে করল্যাছড়ি আর.এস উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক সুলতান আহমেদকে উপজেলার শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক ঘোষণা করেন।

সুলতান আহমেদ শিক্ষা প্রসারের সঙ্গে থেকে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন। তার এই সফলতা প্রাপ্তিতে অগণিত শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অভিনন্দন জানায়।

সুলতান আহমেদ জানান, তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিক্ষক বাতায়নে যুক্ত হন এবং এটুআই’র সাথে আইসিটি জেলা এম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন। নিয়মিত শিক্ষক বাতায়নে কন্টেন্ট তৈরি করে প্রায় দুই শতাধিক ভিডিও কন্টেন্ট ও প্রেজেন্টেশন করে শিক্ষক বাতায়নে মাধ্যমে আপলোড করেছেন। যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী উপকৃত হয়েছে। অন্যদিকে উপজেলায় মাস্টার ট্রেইনার হিসেবেও কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। পঞ্চম বারের মতো জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে উপজেলা পর্যায়ে আমাকে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক মনোনীত করায় উপজেলা প্রশাসনসহ শিক্ষা বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই। এছাড়াও তিনি ২০১৬, ২০১৮ ও ২০২২ সালে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিল।

অন্যদিকে তার মেয়ে সুমাইয়া বিনতে সুলতান স্বর্ণা কলেজ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছে। সে লংগদু সরকারি মডেল কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত আছে।

সুমাইয়া ক্লাসে নিয়মিত (শতভাগ) উপস্থিতি, পাঠদানে গভীর মনোযোগ, মেধাবী ও শৃঙ্খলার কারণে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে কলেজ পর্যায়ে ‘শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী’ মনোনীত হয়েছে।

সুমাইয়া এছাড়াও জেলা পর্যায়ে ২০১৮ সালে শ্রেষ্ঠ গার্লস গাইড (বিদ্যালয়), ২০১৯ সালে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী (বিদ্যালয়) এবং ২০২২ সালে রচনা প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে সেরা বিজয়ী হয়েছিল। পাশাপাশি চিত্রাঙ্কন, রচনা, বিতর্ক ও উপস্থিত বক্তৃতায় উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কৃতিত্ব অর্জন করেছে।

তাছাড়া সমাপনী, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে এবং জেলা পরিষদ কর্তৃক চতুর্থ ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল।

এবিষয়ে সুমাইয়া আপ্লুত কন্ঠে বলেন, এই অর্জন আমার একার নয়। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, বাবা-মা ও সহপাঠীদের। সকল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করেন আমার বাবা। জানতে চাইলে সুমাইয়া বলেন, ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন আছে—দেশ ও জাতির কল্যাণে সেবক হয়ে কাজ করবো।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণ ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বহুমুখী অবদান রাখার জন্য উপজেলা পর্যায়ে তাদেরকে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৩ উদযাপন কমিটি শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক ও কলেজ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হিসেবে নির্বাচিত করেছেন।

প্রসঙ্গত, সুমাইয়ার মাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। এই শিক্ষক দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে সুমাইয়া বড় ও ছেলে রেদ্ওয়ান আহমেদ রাফি সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।