পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষকদের কাছে লাভজনক ফসলের নাম হলুদ। এই অঞ্চলের মাটিও হলুদ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। হলুদ একটি মসলা জাতীয় খাদ্য দ্রব্য। প্রায় সব ধরনের রান্না করা খাবার তৈরিতে এই উপকরণটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়া হলুদের চাহিদা ও বাজার দর ভালো হওয়ার কারণে পার্বত্য অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে এ মসলা জাতীয় ফসল চাষে আগ্রহ বেড়েছে। যার ফলে দিন দিন বাড়ছে এই হলুদ চাষ।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলায়ও বিপুল পরিমাণে চাষ হয় হলুদের। সম্প্রতি উপজেলার ৫ নম্বর ওয়াগ্গা ইউনিয়নের কুকিমারা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের কোলজুড়ে একের পর এক হলুদের ক্ষেত। পাশাপাশি সবুজ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এসব হলুদ নজর কাড়ছে সকলের। স্থানীয় বেশির ভাগ চাষীই এই হলুদের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় কৃষক সুবিমল তঞ্চঙ্গ্যা জানান, হলুদ আবাদ সাধারণত ৯ মাসব্যাপী হয়ে থাকে। বিঘা প্রতি কাঁচা হলুদ পাওয়া যায় প্রায় ১২০ থেকে ১২৫ মণ। হলুদে তেমন রোগ বালাই নেই বলে কৃষকদের তেমন ঝামেলা পোহাতে হয় না। তবে সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করলে এর ফলন ভালো পাওয়া যায়। পাশাপাশি বাজার দর বেশি হওয়ায় হলুদের আবাদে ঝুঁকেছেন স্থানীয় অনেক কৃষকরা।
পাহাড়ের কোলে জুম চাষের পাশাপাশি দীর্ঘদিন যাবৎ হলুদের চাষ করে আসছেন স্থানীয় আরেকজন কৃষক মনিধন তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি হলুদ চাষের বিষয়ে জানান, একসময় জুম চাষ করে সংসার চালাতেন তিনি। তবে একবার স্থানীয় কৃষকদের সাথে পরামর্শ করে তিনি হলুদ চাষ করার বিষয়ে সিন্ধান্ত নেন। এবং হলুদ চাষে অর্থ বিনিয়োগ করেন। পরবর্তীতে তিনি জুম চাষের চেয়ে হলুদ চাষ করেই বেশ লাভবান হয়েছেন বলে জানান। এরপর থেকেই তিনি হলুদের চাষ করে আসছেন। এছাড়া পাহাড়ে হলুদের চাষ সবচেয়ে বেশি ভালো হয় বলে তিনি জানান। এতে তিনি বেশ লাভবান হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন।
স্থানীয় আরেক কৃষক সুমেল তঞ্চঙ্গ্যা হলুদ চাষের বিষয়ে জানান, প্রতি বিঘা জমি হলুদ চাষের জন্য তাদের খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। গত বছর প্রকার ভেদে ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি মণ হলুদ বাজারে বিক্রি হয়েছে। সেই তুলনায় এ বছর হলুদের বাজার দর আরো বেশি হবে বলে ধারণা করছেন কৃষকরা। সে কারণে তারা হলুদ বিক্রি করে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।
কাপ্তাই উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেহ বলেন, দেশের অনান্য জেলার তুলনায় পার্বত্য অঞ্চলে চাষ করা হলুদের কদর অনেকটা বেশি থাকে। বিশেষ করে কাপ্তাইয়ে যেই জাতের হলুদের চাষ হয়, এটি অনেকটা ভালো মানের হলুদ। তাই এর বিক্রিও বেশি হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ১৪টি ব্লকে প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়ে থাকে। তৎমধ্যে ওয়াগ্গা ব্লকে প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া কৃষিবিভাগ থেকে স্থানীয় চাষীদের হলুদ চাষে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে সার প্রয়োগ কিংবা পোকা মাকড় দমনে কি কি করা প্রয়োজন সেই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া পাহাড়ের অধিকাংশ কৃষক জুম চাষের সাথে সাথী ফসল হিসাবে হলুদের চাষে করে থাকে, এতে তারা সঠিক পরিচর্যা করার সুযোগ পায়। পাশাপাশি হলুদ সংরক্ষণ করে রাখা যায় বলে, প্রান্তিক কৃষকেরা হলুদ চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছে। যার ফলে পার্বত্য অঞ্চলে দিন দিন হলুদের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।