কাপ্তাইয়ে মৌসুমী ফলের সমাহার

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ী অঞ্চলে প্রতিবছরই আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারসসহ দেশীয় বিভিন্ন মৌসুমী ফলের ভালো উৎপাদন হয়ে থাকে। যেগুলো স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হয়।

সম্প্রতি কাপ্তাই উপজেলার বড়ইছড়ি, নতুন বাজার, জেটিঘাট বাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকাতে গিয়ে দেখা যায়, হরেক রকম মৌসুমী ফলের জমজমাট ব্যবসা চলছে। এখন ফলের দোকানগুলোতে আম, জাম, আনারস, লিচু এবং কাঁঠালের ছড়াছড়ি রয়েছে। অন্যান্য ফলের সাথে বিভিন্ন জাতের আমের সাজানো-গোছানো উপস্থিতি আলাদা করে নজর কাড়ছে ক্রেতাদের। বিশেষ করে বর্তমানে চলছে গ্রীষ্মকাল। এ ঋতুকে ফলের ঋতুও বলা হয়ে থাকে। আগামী এক-দেড় মাস বাজারজুড়ে এই মৌসুমী ফলের আধিপত্য থাকবে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান।

কাপ্তাইয়ের বড়ইছড়ি বাজারে দীর্ঘদিন মৌসুমী ফল বিক্রয় করে আসছেন আমজাদ আলী। তিনি জানান, তার প্রতিটি আড়তে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ আমের সমারহ রয়েছে। বিশেষ করে কাপ্তাইয়ে আমের ফলন বেশী হওয়াতে তিনি আম বিক্রয়ে বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন বলে জানান। এছাড়া তার দোকানে হাড়িভাঙ্গা, আম্রপালি, হিমসাগর, গোপালভোগ, লবনা, ল্যাঙড়া, মধুমতি, গুটি আমের বিপুল পরিমাণ সমারহ রয়েছে বলে জানান। সেই সাথে স্থানীয় দেশী জাতের আমও রয়েছে বলে জানান।

এদিকে কাপ্তাই নতুন বাজারের ফল ব্যবসায়ী মোঃ সোলাইমান জানান, বছরের এই সময়টিতে মৌসুমী ফলের ভালোই বিক্রি হয়ে থাকে। পাশাপাশি এবছরও বেশ গরম পড়াতে বেশি বেশি ফল বিক্রয় হচ্ছে।
তিনি জানান, গরমে লিচু বিক্রয় অনেকটা কমে এসেছে। বর্তমানে ক্রেতারা আম, জাম এবং আনারস বেশি ক্রয় করছে। যার ফলে এই ফলগুলো বেশি আমাদের সরবারহ করতে হচ্ছে।

দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মৌসুমী ফলের দাম এখন তুলনামুলক অনেকটা সস্তা। বিশেষ করে ভালো জাতের আম বিক্রয় হচ্ছে কেজিতে, ৬০-৭০ টাকা, জাম বিক্রয় হচ্ছে কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, আনারস আকার বেদে বিক্রয় হচ্ছে জোড়া ৪০-৫০ টাকা, ভালো জাতের লিচু বিক্রয় হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা। মোটামুটি দাম ক্রেতাদের জন্য সাশ্রয়ী আছে বলে জানান।

কাপ্তাই জেটিঘাট এর আরেক ফল ব্যবসায়ী সুনীল দাশ জানান, বর্তমানে মৌসুমী ফলের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে এখন ক্রেতারা আপেল, কমলা, আঙ্গুর, মাল্টা কিংবা বিদেশী ফল কিনতে তেমন আগ্রহী হচ্ছেনা। কারণ ওগুলোর দাম অনেক চড়া। এখন মৌসুমী ফল বাজারে আসাতে এবং মোটামুটি সাশ্রয়ী দাম থাকার ফলে নিম্নবিত্ত কিংবা বিত্তবানরা সকলেই মৌসুমী ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে আত্মীয়ের বাড়ির জন্য আম কিনতে বড়ইছড়ি বাজারে এসেছেন সুজন দে। তিনি বলেন আমি ১০ কেজি আম্রপালি জাতের আম কিনেছি ৬০ টাকা দরে। যেই আমগুলো ফরামালিন মুক্ত এবং খেতেও অনেক মিষ্টি।

মৌসুসী ফল কিনতে আসা কাপ্তাইয়ের বাসিন্দা জানে আলম, মোঃ শফিক, রতন দাশসহ বেশকয়েকজন ক্রেতা বলেন, আমরা সব ধরনের মৌসুমী ফল থেকে অল্প অল্প কিনছি। এবার মৌসুমী ফলের চাহিদাও যেমন ভালো আছে, তেমনি ভালো উৎপাদন হয়েছে সেইসাথে সাশ্রয়ী দামে আমরা কিনতে পারছি।

কাপ্তাই উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ ইমরান আহমেদ জানান, প্রায় প্রতিবছরই আমাদের কাপ্তাই উপজেলায় মৌসুমী ফলের ভালো উৎপাদন হয়ে থাকে। বিশেষ করে এখানকার আম, আনারস, লিচু সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের সুনাম ও খ্যাতি দেশজুড়ে রয়েছে। আর আমরাও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে স্থানীয় চাষীদের মৌসুমী এসকল ফল চাষে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং দিক- নির্দেশনা দিয়ে থাকি। এতে কাপ্তাইয়ের মৌসুমী ফল চাষীরা একদিকে যেমন সহযোগীতা পাচ্ছে তেমনি তারা অনেকটা স্বাবলম্বী হচ্ছে

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।