কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিক হারে কমছে পানি

রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ কৃত্তিম জলাধার কাপ্তাই লেকের পানি অস্বাভাবিক হারে কমতে শুরু করেছে। যেটি ষাটের দশকে বাঁধ তৈরির পর আগে কখনো এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। এদিকে কাপ্তাই বাঁধের জলকপাট খোলা না থাকলেও এত পানি কিভাবে কমছে কিংবা কোথায় যাচ্ছে তাই নিয়ে চিন্তা দেখা দিয়েছে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কতৃপক্ষের। কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কমাতে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি জনজীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহ আলম, সুবিমল চাকমা, শান্তি চাকমা সহ একাধিক বাসিন্দা জানান, বছরের বিভিন্ন মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর বাড়ে আবার অনেক সময় কমে। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। হঠাৎ করে অস্বাভাবিক ভাবে কমছে কাপ্তাই হ্রদের পানি। এবছর সেপ্টেম্বর মাসে কাপ্তাই হ্রদে পানি থাকার পর অক্টোবর মাস থেকে বৃষ্টি না থাকায় স্বাভাবিক নিয়মে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে শুরু করে।

তারা জানান, তবে অনান্য বছর যে হারে কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে এবছর তার পরিমাণ অনেকটা বেশি। সাধারনত কাপ্তাই হ্রদের পানি ১০৯ এমএসএল পৌঁছালে বাঁধের ঝুঁকি এড়াতে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলকপাট খুলে দেওয়া হয়। তবে দুমাস ধরে জলকপাট বন্ধ থাকার পরও অস্বাভাবিক ভাবে পানি কমতে থাকায় হ্রদের পাশে বসবাসরত বাসিন্দাদের চিন্তা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্ভরশীল মানুষের জনজীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

কাপ্তাই জেটিঘাটে এবং রাঙামাটি সদর লঞ্চ ঘাটে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অস্বাভাবিকভাবে পানি কমতে থাকায় বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ব্যবসা খাতে। লঞ্চ ও বোট চালকরা বলছেন, প্রতিবছর দুর্গম বাঘাইছড়ি, বরকল, জুড়াছড়ি উপজেলায় ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত নৌযান চলাচল করতে পারতো তবে যেভাবে পানি কমছে এতে চলতি বছরের নভেম্বর এর শেষদিকে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে বাড়বে জনদুর্ভোগ।

পরিবেশ প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা রাঙামাটির গণমাধ্যমকর্মী শংকর হোড় জানান, কাপ্তাই প্রজেক্টের ৫টি ইউনিট চালু রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলেও কখনো কাপ্তাই হ্রদে এভাবে পানি কমতোনা। কিন্তু হঠাৎ করে এবছর দেখা যাচ্ছে প্রচুর পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এটি অবশ্যই চিন্তার বিষয়। এ বিষয়ে পানি কমার কারণ খুঁজে বের করা জরুরী বলে তিনি জানান।

স্থানীয় আরেক পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মন্দিরা ত্রিপুরা জানান, কাপ্তাই হ্রদে কেন অস্বাভাবিক ভাবে পানি কমছে এটার কারণ বের করা জরুরী। কোথাও যদি লিকেজ বা ছিদ্র হয়ে পানিটা সরে যায়, তবে বিশেষজ্ঞ গবেষকদের নিয়ে এর কারণ অনুসন্ধান করা উচিৎ।

এদিকে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, অনান্য বছরের তুলনায় এবছর কাপ্তাই হ্রদে পানি বেশি কমার ফলে নামিয়ে আনা হয়েছে কর্ণফুলী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। এছাড়া এত পানি কিভাবে কমছে এনিয়ে ও চিন্তায় পড়েছে কতৃপক্ষ।

এ বিষয়ে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কয়সুল বারী বলেন, যেহেতু বর্তমানে বছরের এই সময়টা শুষ্ক মৌসুম চলছে। এই সময়ে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ আসলে কমে আসে। তবে অস্বাভাবিক পানি কমে আসার অন্য কোন কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।

জানতে চাইলে কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। কাপ্তাই হ্রদে পানি কমার কোন কারণ আছে কিনা সেটি একটি কমিটি গঠন করে খোঁজ নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বর মাসে কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়ার ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট দিয়ে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৬৬৭ কিউসেক পানি অপসারণ করা হয়েছে। রুলকার্ভ অনুযায়ী নভেম্বর মাসে কাপ্তাই হ্রদে পানি থাকার কথা ১০৬ এমএসএল। তবে বর্তমানে পানি রয়েছে ৯৯ এমএসএল।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।