কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটে ৭ উপজেলায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ!

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মিঠা পানির কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদ। এ হ্রদের ওপর নির্ভর করে চলছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, মৎস্য আহরণ, পর্যটনশিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য। এখন দখল, দূষণ আর মানবসৃষ্ট বর্জ্যের সঙ্গে পলি জমে তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেই কাপ্তাই হ্রদে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট।
এ কারণে রাঙামাটির জেলা শহরের সঙ্গে বাঘাইছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও কাপ্তাই উপজেলার মানুষের যোগাযাগের নৌপথে একমাত্র মাধ্যম যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাত উপজেলার পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ।

প্রতিবছর খরা মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে হ্রদে জেগে ওঠে অসংখ্য ডুবোচর ও গাছের গুঁড়ি। কিন্তু এবার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। অবস্থা এতটাই নাজুক হয়ে পড়েছে যে, হ্রদে চলাচলকারী ৫৩টি যাত্রীবাহী লঞ্চ ও তিন শতাধিক বড় ইঞ্জিনবোট চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে নৌযান মালিক সমিতি। এতে নৌযান মালিকদের দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে ১২ লাখ টাকার বেশি। আর এ খাতকেন্দ্রিক আয় বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পাঁচ হাজার নৌযান শ্রমিকও।

বিকল্প উপায়ে পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ অর্থ ও সময়। ইঞ্জিনচালিত ছোট দেশীয় নৌকায় চড়ে আর পায়ে হেঁটেই দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হচ্ছে দুর্গম পাহাড়ের বিভিন্ন উপজেলার অধিবাসীদের।

বৃহত্তর মাইনী বাজার ব্যবসায়ী সোহেল বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের একটি বস্তা আগে যেখানে ১০ টাকা খরচে পরিবহণ হতো এখন সেটি ডবল হয়ে গেছে। পাহাড়িরাও কাঁচামাল আনতে পারছেন না। যাতায়াত করতে পারছেন না।

নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত দে বলেন, ‘নৌযান বন্ধ হওয়ায় এখাতের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা এখন বেকার হয়ে অর্থকষ্টে পড়েছে। টানা ও ভারী বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না’।

লঞ্চ মালিক মো. আলমগীর বলেন, ‘প্রায় ছয় মাস ধরে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকার কারণে আয় বন্ধ হয়ে গেছে। তার ওপর লঞ্চ মেরামত ও স্টাফদের বেতন দিতে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমরা বছরে প্রতিটি লঞ্চের জন্য ৪০-৫০ হাজার টাকা কর দিই। কিন্তু সরকার হ্রদ খননের বিষয়ে কিছুই করছে না’।

রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈনউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘হ্রদে চলাচলকারী ৫৩টি যাত্রীবাহী লঞ্চ ও ৩০০টি বড় ইঞ্জিনবোট চলাচল এখন বন্ধ রয়েছে। এতে নৌযান মালিকদের দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে ১২ লাখ টাকার বেশি। এখন ছোট ছোট নৌকা দিয়ে যাত্রী পারাপার করছে। এই হ্রদকে যদি ড্রেজিং করা না হয়, এখানে ভবিষ্যতে পুরোটা বন্ধ হয়ে যাবে’।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, হ্রদ খননের বিষয়ে নিয়মিত চিঠি আদান-প্রদান চলছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প নিয়েছে। ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। একনেকে গেলে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে জানান”।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।