মাথায় কালো টুপি, গায়ে গাউন। দল বেঁধে ছোটাছুটি করছেন এদিক সেদিক। কেউবা ছবি তুলতে ব্যস্ত কেউবা আড্ডায় মেতেছেন। কারও গল্পের সঙ্গী বন্ধু-বান্ধব আবার কেউবা পিতা মাতাকে সঙ্গে এনেছেন স্মরণীয় সময়ের সাক্ষী করতে। বলছিলাম বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির ২য় সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ-উদ্দীপনার কথা।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাস্পাস মুখরিত হয়ে ওঠে গ্রাজুয়েটদের পদচারণায়। রঙ বেরঙের সাজসজ্জার সাথে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস মাতিয়ে তোলে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
সরজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে খেলার মাঠ, লেক, স্মৃতির শহীদ মিনার ও বঙ্গবন্ধু ফ্রিডম স্কোয়ার এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থানসহ পুরো ক্যাম্পাস সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন গ্রাজুয়েটরা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার করে কেউবা চাকরিতে প্রবেশ করেছেন আবার কেউবা এখনও বেকারত্ব গুছানোর চেষ্টায় আছেন। তবে সমাবর্তনের অনুষ্ঠানে চাকরি বা বেকারত্ব কোন কিছুরই যেন ছাপ নেই। সবাই মেতেছেন আনন্দ উল্লাসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে ফটোবুথ। আর এসব বুথগুলো ঘিরে আছেন শিক্ষার্থীরা। আবার কেউবা এখনও নিজেদের প্রস্তুত করছেন। অন্যদিকে সমাবর্তনের মঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য।
তন্নী শীল—বিশ্ববিদ্যালয়ের কস্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। অনেক আগেই শেষ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। বিয়ের পর সংসারে এসেছে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসেছেন স্বামী-সন্তান ও পিতা-মাতা নিয়ে। তিনি বলেন, এটি এক অন্যরকম মহূর্ত। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে এসেছি, মেয়ের বাবা এসেছে, আমার বাবা-মা এসেছেন। সত্যি এ এক অন্যরকম অনুভূতি।
জমির ও চাঁদনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। শিক্ষাজীবনে ছিলেন অনেক কাছের বন্ধু। সমাবর্তনে এসেও তারা মেতেছেন হাসি-আনন্দে। একজন আরেকজনকে প্রপোজের ছলে মাতিয়ে তুলেছেন পুরো অঙ্গন। জমির বলেন, অনেক আগেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গিয়েছি। আমরা সবাই বিভিন্ন স্থানে কর্মরত। সমাবর্তনের উপলক্ষে ক্যাস্পাসে এসেছি, সকলের সাথে দেখা হলো। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সময়গুলো অনেক সুন্দর ছিলো। অনেক মিচ করি।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পার্শ্বে চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৪ কিলোমিটার দূরে গ্রামীণ মনোরম পরিবেশে ১০০ একর আয়তনবিশিষ্ট বিজিসি বিদ্যানগর, চন্দনাইশে এই বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি অনুষদের অধীনে ৬টি বিভাগ রয়েছে এবং বিভাগসমূহের মাধ্যমে ৯টি প্রোগ্রামে বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে।
২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ৩৩টি ব্যাচে মোট ১২ হাজার ৬৮০ জন শিক্ষার্থী সফলভাবে তাদের গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ১ম সমাবর্তনে ৭ হাজার ৩৭৭ জনকে গ্রাজুয়েশন সনদ প্রদান করা হয়। এবারের সমাবর্তনে সনদ প্রদান করা হবে ৪ হাজার ৬৬৩ জন শিক্ষার্থীকে।
সমাবর্তনে যেসব শিক্ষার্থী অসাধারণ মেধার স্বাক্ষর রেখেছে তাদের মধ্যে ৫ জনকে চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল, ৪ জনকে ভাইস চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল ও ৬ জনকে চেয়ারম্যান গোল্ড মেডেল প্রদান করা হচ্ছে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।