১৩ বছরের কিশোর অদ্রিপ অহন সায়ান। পড়তো নগরীর হাজী মুহাম্মদ মহসিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণিতে। সন্তানকে নিয়ে স্কুল শিক্ষক দম্পত্তি বিশ্বজিত দাশ ও স্নেহলতা দাশের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন।
সেই স্বপ্নের পথে হাঁটছিলো সায়ান। মাত্র ১৩ বছর বয়সে রপ্ত করে গিটার বাজানো। স্কুল-পড়াশোনার বাইরে গিটার বাজিয়ে, ক্রিকেট খেলে বন্ধুদের মাতিয়ে রাখতো।
কিন্তু গত মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) স্কুল ছুটির পর থেকে সায়ান নিরুদ্দেশ, ফেরেনি ঘরে।
তার পিতা চকবাজার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। সেই সূত্রে পুলিশ স্কুলের আশপাশের সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে।
পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখতে পায় সায়ান চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের পাশের গলিতে এক নারী ও এক স্কুল ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে বিদায় নিচ্ছে।
সেই ফুটেজের সূত্র ধরে পুলিশ বের করে প্রেমের বিষয়টি। বৃহস্পতিবার বিকেলে তদন্ত সম্পৃক্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়ানের সঙ্গে জামালখানস্থ আরেকটি সরকারি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে। বিষয়টি জেনে যায় ওই ছাত্রীর পরিবার। ওই ছাত্রীকে শাসানোর পাশাপাশি তার মা সায়ানের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চায়। সায়ানের কাছে তার বাবা-মায়ের নাম্বার চায়। সায়ান তার নানু আর মামীর নাম্বার দেয় কিন্তু মা-বাবার নাম্বায় দেয়নি।
ওই ছাত্রীর মা সায়ানের নানু আর মামিকে বিষয়টি জানায়। নানু-মামী হয়ে প্রেমের বিষয়টি আসে বাপের কানে। নগরীর আমবাগান ইউসেফ স্কুল শিক্ষক পিতা বিশ্বজিত সন্তানকে বিষয়টি নিয়ে শাসন করেন।
২৯ আগস্ট নিরুদ্দেশ সায়ানের খোঁজ না মিললেও বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে নগরীর কোতোয়ালী থানার অভয়মিত্র ঘাট এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে সদরঘাট নৌ পুলিশ।
সদরঘাট নৌ থানার ওসি মো. একরাম উল্লাহ বলেন বুধবার রাতে আমাদের কাছে ৯৯৯ থেকে ফোন আসে শাহ আমানত সেতুর পাশে নদীর ধারে একটি লাশ ভাসছে। আমরা রাতে তল্লাশী করে জোয়ার-ভাটার কারণে কিছু পাইনি। আজ আবার তল্লাশী শুরু করি। দুপুরে অভয়মিত্র ঘাট এলাকায় হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ড্রেস পরা এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করি। পরে তার অভিভাবকরা এসে লাশ শনাক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, লাশের সুরতহাল করে আমরা ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছি। লাশের শরীরের আঘাতের কোনো চিহ্ন পাইনি। তারপরও মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা ময়না তদন্ত করতে পাঠিয়েছি।
চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক ও এই ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা মো. ইমরান বলেন, এখনো পর্যন্ত যা পেয়েছি তাতে মৃত্যুর কারণ শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শরীরে যেহেতু আঘাতের বাহ্যিক চিহ্ন নেই হত্যা বলারও সুযোগ নেই। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পেলে সেই আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে।
পুলিশের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, যে ছাত্রীর সঙ্গে আয়ানের সম্পর্ক ছিল তাকে এবং তার মাকেও ইতোমধ্যে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে সন্দেহজনক কিছু না পেয়ে পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে।
সার্বিক অবস্থায় পুলিশের দাবী—পরিবারের শাসনের ভয়ে সায়ান হয়তো আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। মৃত্যুর রহস্য নিশ্চিত হওয়া যাবে ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।