চড়ুইভাতি শব্দটি শুনলেই মনের মধ্যে উঁকি মারে ছেলেবেলার একরাশ সোনালী স্মৃতি। ক্ষনিকের জন্য হারিয়ে যাই শৈশবের দুরন্তপনায়। যা এক নিমেষে দূর করে দেয় যত ক্লান্তি, গ্লানি, অপ্রাপ্তি। ক্যাম্পাসে শীতের আমেজ শুরু হতেই গাদাগাদা থিওরী মুখস্থ করার একঘেয়েমি দূর করতে চড়ুইভাতির আয়োজন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পদার্থবিদ্যা বিভাগের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা উদ্যোগে চবি কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এ চড়ুইভাতির আয়োজন করে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে গান-বাজনা, আড্ডা ও বিভিন্ন ধরনের গ্রামীণ খেলাধুলায় মেতে উঠে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্বের কঠিন বিষয় গুলোর মধ্যে অন্যতম এ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের অনার্স-মাস্টার্স জীবনে ক্লাস,ল্যাব,ল্যাব রিপোর্ট, পরীক্ষা এসব নিয়েই কাটে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ সময়। চবি পদার্থবিদ্যা বিভাগে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এমন আয়োজনে সহজে জিএল ইকুয়েশন, আইনস্টাইনের ফিল্ড ইকুয়েশন, কোয়ান্টাম মেকানিক্স, কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্সের রেশ কাটিয়ে অনেক উৎফুল্ল বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
এ চড়ুইভাতি নিয়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী দিদারুল ইসলাম বুলবুল জানান, আমাদের ক্লাস,ল্যাব, পরীক্ষার বাহিরে গিয়ে, সকল জুনিয়র ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে এমন আড্ডা সাধারণত হয়ে উঠে না। আজকের এই চড়ুইভাতি নিয়ে আমি অনেক উৎফুল্ল। এখানে এসে সারাদিনের ক্লান্তি মূহুর্তে শেষ হয়েছে।
মাস্টার্সের শিক্ষার্থী, সালমান শামিল সাকিব বলেন, পদার্থবিদ্যা পড়লে সাপ্লি-ইম্প্রুভের সবারই থাকে। কিন্তু এর মাঝে সাপ্লি-ইম্প্রুভের যন্ত্রণা মুক্তির উদ্দেশ্যে এধরণের উদ্যোগ কিছুটা সময়ের জন্য হলেও স্বস্তিদায়ক। আমি চাই আগামী বছর গুলোতেও জুনিয়ররা এমন উদ্যোগ চালিয়ে যাবে।
মাস্টার্সের আরেক শিক্ষার্থী তাসনিম রেজা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষের দিয়ে এসে জুনিয়র ভাই-বোনদের এমন আয়োজন আমি অনেক খুশি। এতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতির পাতা আরেকটু দীর্ঘ হল।
মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ জানান, ক্যাম্পাসে এখন শীতের আগমন ঘটছে। শীতের ও পদার্থবিদ্যার জড়তা কাটাতে ছোট ভাইদের এমন আয়োজন আসলেই মনে রাখার মতোই। পড়াশোনার একঘেয়েমি কাটাতে এমন আয়োজন সাহায্য করে। এছাড়া নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরো গভীর হয়।
তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী মহিবুন্নেসা মনি বলেন, একটা আড্ডা মুখর সন্ধ্যার মধ্যদিয়ে পদার্থবিদ্যা পরিবার দেখেই ভালোই লাগছে। এতে আমাদের পদার্থবিদ্যা পরিবারের সকলে বন্ধন আরো দৃঢ় হলো।
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল রায়হান বলেন, আমি একবছর এ বিভাগে পড়াশোনা করছি। কিন্তু এখনো বিভাগের কাউকে ওভাবে পরিচয় করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া আমাদের ল্যাব ক্লাসের কারণে কখনো এভাবে সবার একসাথে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়ে উঠে না। আজকের আয়োজন আমাদের সে সুযোগ করে দিয়েছে। বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে আমি বেশ উৎফুল্ল। তাই আয়োজক ভাই-বোনদের নিকট কৃতজ্ঞ।
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী দিল আফরোজা দিয়া অনুভূতি জানাতে গিয়ে জানান, পদার্থবিদ্যা পরিবারে আমি একেবারেই নতুন। আমাদের দুই মাস ক্লাসের মধ্যে কখনো সিনিয়রদের কথা বলার সুযোগ হয়ে উঠেনি। আজ এমন আয়োজন আমি অনেক খুশি। আজ সিনিয়রদের সাথে এমন আড্ডায় অনেক ভালো লাগছে।
আয়োজক ব্যাচের পক্ষে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোফাজ্জল হোসেন নয়ন জানান, আমাদের পড়ালেখার চাপে আমাদের সিনিয়র জুনিয়র একসাথে হওয়ার সুযোগ খুব একটা হয়ে উঠে না। জুনিয়র সিনিয়রদের সম্প্রতির মেলবন্ধন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে আমাদের এই আয়োজন। এই আয়োজনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আমাদের সেশনের পাশাপাশি ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের জুনিয়ররা আমাদের সহযোগিতা করেছে। এমন আয়োজনে থাকতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত।
আয়োজক ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দিন ফাহিম জানান, এমন আয়োজন করতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত। আমাদের মাস্টার্সের ভাইদের সাথে এটাই হয়তো শেষ আড্ডা। তাই সকলকে একসাথে করতে পেরে আমার অনেক ভালো লাগছে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।