খাল কেটে দিঘি খনন, সীমাহীন দুর্ভোগে ৩শ পরিবার

অবৈধভাবে খালের জায়গা দখল করে মাছ চাষের জন্য দিঘি খনন করায় পানিবন্দী হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ইছাখালী ইউনিয়নের চুনি মিঝির টেক এলাকায় বাসিন্দারা। প্রভাবশালী একটি চক্র সরকারি জমি দখল করে এবং খাল কেটে এসব দিঘি খনন করছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, খালের পানি চলাচল বিঘ্ন ঘটায় সামান্য বৃষ্টিতেই জমে যাচ্ছে পানি। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এলাকাবাসী পানিবন্দী হয়ে রয়েছেন প্রায় ১০ দিন ধরে। পানির কারণে ২ বেলা রান্না করে খাওয়া-দাওয়া কঠিন হয়ে গেছে তাদের। কেউ কেউ রাতে থাকার জন্য আত্মীয়দের বাড়িতেও আশ্রয় নিচ্ছেন। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শিক্ষার্থী-পরিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি খাস জমি দখল করে অনেকে দিঘি খনন করেছেন। আবার কেউ কেউ সড়কের পাশে ও ফসলি জমি কেটে বানাচ্ছেন দিঘি। পানি চলাচলের একমাত্র খাল দখল করে রাখায় সামন্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে এলাকার অধিকাংশ পরিবারের ঘরে ডুকে যাচ্ছে বৃষ্টির পানি। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে এলাকার প্রায় ৩০০ পরিবারের।

স্থানীয়দের অভিযোগ—ইয়াছিন, হারুন, সুজন, নাজিম, মূসা, কামরুল, আজগর, রসূল আহম্মদসহ অনেকের দিঘি রয়েছে এই জায়গা। তারা পানি চলাচলের জন্য কোন ধরণের জায়গা রাখেননি। একমাত্র পানি চলাচলের কোম্পনী নগর নামক খালটির শ্রেণি পাল্টে ছোট করে পেলছেন। এতে বৃষ্টি হলেই জমছে পানি।

পানিবন্দী হয়ে থাকা নাছিমা নামে স্থানীয় এক গৃহিনী জানান, প্রায় ১০ দিন ঘরে পানি। ২ সন্তান এবার এইচএসসি পরিক্ষা দিচ্ছে। ঠিকমত সন্তানদের খাওয়া দিতে পারছি না। টিউবওয়েলে পানি উঠে না। পানির জন্য ১ কিলোমিটার হাঁটা লাগে।

তিনি বলেন, দিঘির পাশে বড় করে পানি চলাচলের জায়গা করলে পানি জমে থাকতো না। আর এসব সমস্যার সম্মুখীনও হতে হতো না।

ষাটোর্ধ্ব বিবি ছকিনা নামে অপর একজন বলেন, কখনও এই রকম পানি উঠতো না। দিঘি খনন হওয়ার পর হালকা বৃষ্টি হলে ঘরে পানি উঠে যাচ্ছে। দিঘির মালিকদের কিছু বললে তারা ঘর-বাড়ি বিক্রি করে চলে যাওয়ার জন্য বলে।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দিন বলেন, “এই জায়গায় ৮৬ ফুট সরকারি খাস জায়গা ছিলো। পানি চলাচলের জন্য অনেক বড় খাল ছিলো। মাছ চাষীরা দিঘি খনন করে খালের জায়গাও দখল করে নিয়েছেন। এখন পানি চলাচলের কোন জায়গা নেই। হালকা বৃষ্টি হলে পানি জমে প্রায় ৩০০ পরিবার কষ্ট করে। খালের জায়গা উম্মুক্ত করে দিলে আর পানি জমে থাকবে না।”

জানতে চাইলে এসব বিষয়ে ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তাফা বলেন, “বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। মাছ চাষীরা অবৈধভাবে দিঘী খনন করেছে। এই এলাকায় অনেক মানুষ পানিবন্দী হয়ে কষ্ট করছে। আইনশৃঙ্খলার মিটিকে কয়েকবার বিষয়টি বললেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।”

মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, “আমি নিজে ওই এলাকায় গিয়েছি। অনেক পরিবার পানিবন্দী হয়ে রয়েছে। অবৈধ দিঘী খননের কারণে পানি জমে থাকে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।