খুনির ছেলে অপবাদ দিবে, ফাঁসির আগে দেখা করেননি আসামিরা

কুমিল্লায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি চান না তাদের ছেলে-মেয়েকে মানুষ খুনির ছেলে অপবাদ দিক। এ কারণে ছেলে-মেয়েকে কারাগারে এসে দেখা করতে নিষেধ করেছেন তারা।

বুধবার (৯ মার্চ) সকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুমিল্লা কারাগারের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দেখা করার সুযোগ ছিল সন্তানদের। একই সঙ্গে স্বজনদেরও কারাগারে আসতে নিষেধ করেছেন। কারণ দেখা করতে এলে মানুষ চিনে ফেলবে তাদের ছেলে-মেয়ে ও স্বজনদের।

দীর্ঘ প্রায় ১৯ বছর পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ফাঁসি কার্যকরের দায়িত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জল্লাদ নাছির উদ্দিন ও সিরাজ মিয়া।

এসময় কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন, জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ, জেলার আসাদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ জানান, ফাঁসি কার্যকরের পর ময়নাতদন্তসহ কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের মরদেহ কারাগারের ব্যবস্থাপনায় অ্যাম্বুলেন্সে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত শিপন চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার দক্ষিণ আমবাগানের মৃত ইউনুছ হাওলাদারের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া থানার নন্দনসার গ্রামে।

অপর আসামি নাইমুল ইসলাম ওরফে মঈন চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার লালখান বাজার ডেবারপাড় এলাকার মৃত ঈদুন মিয়া সরকারের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার রতনপুর পূর্বপাড়া গ্রামে।

মঙ্গলবার দিনভর কনডেম সেলে দুজনই নামাজ ও কোরআন শরীফ পড়ে সময় অতিবাহিত করেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কারাগারে এসে দণ্ডপ্রাপ্ত মঈনের সঙ্গে তার ভাই-বোনসহ ৩ জন, শিপনের সঙ্গে তার মা-ভাইসহ ৩ জন প্রায় ২০ মিনিট কথা বলেন।

কারাবিধি অনুসারে বিকেল ৫টা এবং সর্বশেষ রাত ৯টার দিকে কারাগারের সহকারী সার্জন ডা. রেজা মো. সরোয়ার আকবর দু’দফায় দুই জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।

রাতে গোসল শেষে তওবা পাঠ করান কারা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফেজ মো. জোনাইদ। এরপর তাদের পছন্দের খাবার খাওয়ানো হয়।

উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ১৪ জুন চট্টগ্রাম নগরের খুলশীর উত্তর আমবাগান রেলওয়ে কোয়ার্টারের বাসায় ঢুকে ঘাতকরা গুলি চালিয়ে হত্যা করে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী-১ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী শফিউদ্দিনকে।

শফিউদ্দিন স্থানীয় রেলওয়ে আমবাগান এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন কারণে রেলওয়ের জায়গা থেকে চার দফায় অবৈধ বস্তি ও কলোনি উচ্ছেদ করতে বাধ্য হয় প্রশাসন। এসব ঘটনার জেরেই সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তার সরকারি বাসায় ঢুকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে। পরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে বোমা ফাটিয়ে এলাকা ত্যাগ করে ঘাতক দল।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মাহমুদা বেগম বাদী হয়ে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০০৪ সালের ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২৩ জনের সাক্ষ্য নিয়ে এ হত্যা মামলায় দুই আসামি শিপন ও ইমনকে ফাঁসি, সাত আসামিকে যাবজ্জীবন এবং চারজনকে খালাস দেন।

এমএফ

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।