গভীর সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উপকূলে আসছে ইলিশ

আসানিতে ভাগ্য বদল কক্সবাজার জেলেদের

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’র প্রভাবে প্রায় সপ্তাহজুড়েই হালকা থেকে মাঝারি আকারের বৃষ্টিপাত হচ্ছে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এরই প্রভাবে ইলিশেরা গভীর সাগর থেকে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে উপকূলের দিকে আসছে আর ধরা পড়ছে জেলেদের জালে।

ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ কক্সবাজারের জেলেদের জন্য অভিশাপের পরিবর্তে যেন এসেছে আশীর্বাদ হয়ে।

জেলেরা বলছেন, দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস পর বঙ্গোপসাগরে তারা প্রত্যাশিত ইলিশের দেখা পেয়েছেন। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও সতর্কতা সংকেত জারির পর তারা উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরছিলেন। এমনই সময়ে গত প্রায় সপ্তাহখানেক আগে সাগরে তারা ইলিশের বিচরণ বৃদ্ধির ঘটনা লক্ষ্য করেন।

শহরের ফিশারীঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, গত ৫ দিন ধরেই গড়ে ২০ মেট্রিক টনের বেশি ইলিশ এসেছে শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। এর আগে এটা ছিল ২/৩ টনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। গত প্রায় ছয় মাস ধরেই বঙ্গোপসাগরে ইলিশের এমন ‘আকাল’ চলছিল যা গত ২৫ বছরেও দেখা যায়নি বলে জানান কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী।

তিনি জানান, ইলিশ ধরার মৌসুমে ফিশারীঘাটে গড়ে প্রতিদিন ১শ’ থেকে দেড়শ’ মেট্রিক টন ইলিশ আসে। আর মন্দা মৌসুমেও আসে অন্ততপক্ষে ২০ থেকে ২৫ টন ইলিশ। যার মধ্যে স্থানীয় বাজারে প্রায় ৩ টন ইলিশ বিক্রি হয়, আর বাকি ইলিশগুলো পাঠানো হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

কিন্তু গত ছয় মাসের মধ্যে ৫/৬ দিনের কথা বাদ দিলে দৈনিক গড়ে ৫ টন ইলিশও মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আসেনি। আর গত দুই মাস ধরে তা ছিল ৩ টনের নিচে।

তবে গত ৫ দিন ধরেই শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গড়ে ২০ মেট্রিক টনের বেশি ইলিশ এসেছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরো জানান, স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত থাকায় চলতি সপ্তাহর শুরু থেকেই কক্সবাজার থেকে দৈনিক ১২ থেকে ১৮ টন করে ইলিশ যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, সাগরে প্রত্যাশিত মাছের দেখা না পেয়ে গত প্রায় ছয় মাস ধরেই ট্রলার মালিকরা লোকসান গুণছিল। ফলে অধিকাংশ ট্রলারই মাছ ধরা বন্ধ রেখে ঘাটে নোঙর করা ছিল। কিন্তু গত ৫/৬দিন ধরে সাগরে ইলিশ ধরা পড়ার খবরে অন্যান্য জেলে-বহদ্দারদের মাঝেও উৎসাহ তৈরি হয়। তারাও সাগরে যাওয়া শুরু করে।

তিনি জানান, কক্সবাজারে ছোট বড় প্রায় ৭ হাজার যান্ত্রিক নৌযান সাগরে মাছ ধরে। এরমধ্যে বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে।

ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে থাকে। যে কারণে ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো সাগর মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়।

বিহিন্দি জালে ইলিশ ব্যতীত ছোট আকারের প্রায় পাঁচ প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। কিন্তু গত বছর অক্টোবরে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে প্রত্যাশিত হারে সাগরে কোনো জাতের মাছেরই দেখা মিলছে না।

এমনকি গত ২ মাসে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ায় মাছধরা বন্ধ রেখে কক্সবাজারের অধিকাংশ ট্রলারই ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, “জেলে-বহদ্দারদের প্রত্যাশা ছিল-বৃষ্টি হলেই গভীর সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উপকূলমুখী হবে ইলিশসহ অন্যান্য জাতের মাছ। আর তখনই ফের সাগরে মাছ ধরতে যাবে তারা। কিন্তু গত মাসের ১৯ তারিখের এক পশলা বৃষ্টির পরও সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি জেলেদের। তবে এবার আশায় বুক বেঁধেছে তারা, ছয় মাসের লোকসান পুষিয়ে নিতে।”

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।