গৌরবময় পথচলার ৩২ বছরে বিএসবি

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক। দেশের শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে পড়তে উৎসাহী এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে দীর্ঘদিন বেশ সুনামের সাথে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

অগ্রযাত্রার এই পথে প্রতিষ্ঠানটি পেরিয়েছে ৩১ বছর। গত ৩ সেপ্টেম্বর বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক পদার্পন করেছে ৩২তম বর্ষে। শিক্ষার্থী-অভিভাবক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রতিষ্ঠানটির নতুন বর্ষের পথচলা সুগম এবং অর্জনমুখী হওয়া আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক যাত্রা শুরু করে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে নানা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন লায়ন এম কে বাশার। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের হাত ধরে বিশ্বের ২২টি দেশে ১ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছে।

বিএসবির সেবার মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যে নির্দেশিকা প্রদান, ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন, ভিসা প্রসেসিং এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে স্পট এডমিশনের সুযোগ দিয়ে আসছে বিএসবি।

প্রতিষ্ঠানটি শুধু বিদেশে উচ্চশিক্ষা নয় দেশেও ডিজিটাল ব্যবস্থায় শিক্ষাখাতকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে বিএসবি। বিএসবির প্রতিষ্ঠিত ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ প্রায় ১৭টি প্রতিষ্ঠান দেশের শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আয়ের মাধ্যমে যাতে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে পারে সেদিকেও নজর রাখছে বিএসবি।

বিএসবি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক সার্ভিস একে একে তার পরিধি বৃদ্ধি করতে গিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি দেশে আধুনিক ও মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ায় মনোনিবেশ করে। তারই ধারাবাহিকতায় লায়ন এম কে বাশার ২০০৪ সালে ঢাকায় গড়ে তোলেন ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মায়ের নামে মাদ্রাসাতু ছালেহা খাতুন মাদ্রাসা। পরবর্তীতে শিক্ষা, সেবা ও জনকল্যাণমুখী নানাবিধ সেবা কার্যক্রমকে সুচারুরূপে পরিচালনার জন্যে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় বিএসবি ফাউন্ডেশন।

যাত্রা শুরুর পর থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান ছাড়াও এটি বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে আসছে। বিএসবি ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ভিশন-২০২১, বিএসবি ফাউন্ডেশন এওয়ার্ড, স্কলারশীপ প্রদান, বিনামূল্যে চক্ষু অপারেশন, আমরা শিক্ষার সুযোগ চাই ইত্যাদি কর্মসূচি।

ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক সার্ভিসের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মাদ্রাসাতু ছালেহা খাতুন মাদ্রাসাকে ফাউন্ডেশনের অধীনে আনা হয়। পরবর্তীতে এ ফাউন্ডেশন সব মিলিয়ে ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।

প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো—ক্যামব্রিয়ান প্রি-স্কুল, ক্যামব্রিয়ান প্রাইমারি স্কুল, ক্যামব্রিয়ান মাধ্যমিক স্কুল, ক্যামব্রিয়ান ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ, মেট্রোপলিটন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কিংস কলেজ, উইন্সাম্ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ক্যামব্রিয়ান কালচারাল একাডেমি, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ (ঢাকা, চট্টগ্রাম, আখাউড়া ও নারায়ণগঞ্জ) এবং কিংস স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ আরও কয়েকটি।

ইতোমধ্যে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নাচ, গান, আবৃত্তি, ড্রইং, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও বিভিন্ন খেলাধুলাসহ Graphics Design, Coding, 3D Animation, Python Programming, Robotics প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও ক্যামব্রিয়ান ইনস্টিটিউট অব মর্ডান ল্যাংগুজেস-এর অধীনে IELTS, Cambridge Assessment English, Aptis কোর্স করানো হয়।

বিএসবি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন এম কে বাশার মনে করেন, শিক্ষা ছাড়া মানুষ অন্ধ এবং অন্ধত্বের রং কালো। আর সে কারণেই বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক, বিএসবি ফাউন্ডেশন,

ক্যামব্রিয়ান কলেজ এবং এর অঙ্গ সংগঠনসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা কালো পোষাক পরিধান করে। যতদিন দেশ নিরক্ষরমুক্ত না হবে ততদিন এ কালো পোশাক পরিধান করবে বিএসবি পরিবারের সদস্যরা।

বিএসবি-ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী লায়ন এম কে বাশার বলেছেন, শিক্ষার সকল সূচক ঊর্ধ্বমুখী হলেও দেশের শিক্ষার মান এখনো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছেনি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তরের পরিচালন কর্তৃপক্ষ আলাদা হলেও এই তিন ক্ষেত্রের পড়াশোনার মধ্যে সমন্বয় নেই বলে শিক্ষা তার মূল লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না। এক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে মানসম্পন্ন শিক্ষা সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক।

লায়ন এম কে বাশার বলেন, নানা কারণে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেড়েছে। দেশে পড়াশোনা শেষে চাকরির কোনো নিশ্চয়তা না থাকলেও বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ রয়েছে। আবার পড়াশোনা শেষে সংশ্লিষ্ট দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসেরও সুযোগ শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়তে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করছে। বিগত তিন দশকে শুধু বিএসবির মাধ্যমেই এক লাখের কাছাকাছি শিক্ষার্থী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেছে।

বিএসবির ভিশন

একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে বিএসবি। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক মুক্তি। স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জিত হয়নি। জীবনের জন্য প্রয়োজন মৌলিক পাঁচটি বিষয় অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান। কিন্তু শিক্ষার স্থান সবার উপরে। শিক্ষার অভাব পূর্ণ হলে অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনীয়তা স্বাভাবিকভাবেই আর অবশিষ্ট থাকে না। তাই নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে বিএসবি ফাউন্ডেশন। ইতোমধ্যে স্বাধীনতা অর্জনের কয়েক যুগ অতীত হয়েছে। কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত ফল অর্জিত হয়নি। অন্যান্য ক্ষেত্রেও মৌলিক অধিকারগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। সবার আগে বাস্তবায়ন করা দরকার নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ। অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে না পারলে মৌলিক অধিকার, বাঁচার অধিকার এবং মানবিক অধিকারগুলো উপেক্ষিত থাকবে। শিক্ষার আলো ছাড়া সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের কোনো স্তরে পৌঁছা সম্ভব হবে না। মানুষের জীবনে শিক্ষা না থাকলে অজ্ঞতা যাবে না। দারিদ্র্য দূর হবে না। সংস্কারবোধ ও মানবতাবোধ জন্ম নিবে না।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।