গ্রীণ শীপ ইয়ার্ড বাড়াতে সরকারে এগিয়ে আসা উচিত—কেইজি টমোডা

বাংলাদেশে শীপ ব্রেকিং এণ্ড রিসাইক্লিং শিল্পের অগ্রগতি ও উন্নয়নে গ্রীণ শীপ ইয়ার্ড বাড়াতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাপানিজ শীপ ওনার্স এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কেইজি টমোডা।
সোমবার (২২ মে) সীতাকুণ্ডের কুমিরায় অবস্থিত কেআর শীপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ড পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন। কেআর শীপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ড দেশের চতুর্থ গ্রীণ শীপ ইয়ার্ড হতে যাচ্ছে।

কেইজি টমোডা আরও বলেন, আমরা জাহাজ বিক্রির জন্য অন্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশকে বেটার অপশন হিসেবে নিতে চাই। বাংলাদেশে এ শিল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যত উঁকি দিচ্ছে। কেননা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং ব্যবসা বান্ধব। আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তারা ব্যবসা চালিয়ে নিতে আগ্রহী৷ একইসাথে পরিবেশ বিষয়ে তারা এখন অনেক বেশি সচেতন। কেইজি টমোডা আরও বলেন, ভারতে একশোর অধিক শীপ ইয়ার্ড গ্রীণ হয়েছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে পিছিয়ে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ এ সেক্টরে এগিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে ইয়ার্ডগুলো গ্রীণ হতে শুরু করেছে। পিএইচপি, এস এন কর্পোরেশন, কবির শীপ ব্রেকিং গ্রীণ ইয়ার্ড হয়েছে। কেআর শীপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ড গ্রীণ ইয়ার্ড হওয়ার পথে। শীঘ্রই তারা সনদ পেতে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শীপ ইয়ার্ডগুলো গ্রীণ হলে জাহাজ বিক্রিতে আমরা বাংলাদেশকে বেচে নিব। কারণ আমরা বাংলাদেশকে খুব বেশি পছন্দ করি। জাহাজ পাঠানোর জন্য আমরা বাংলাদেশকে বেটার অপশন হিসেবে নিতে চাই। এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে গ্রীণ শীপ ইয়ার্ডের সংখ্যা অনেক বাড়াতে হবে। এটি অতিব জরুরী। আমরা চাই না আমাদের পাঠানো জাহাজ বাংলাদেশের পরিবেশ ও মানবজীবনে কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলুক। আমরা এসব ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন।

কেইজি টমোডা আরও বলেন, আজকে আমরা কেআর শীপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ড পরিদর্শন করেছি। এটি এবারের মতো আমাদের শেষ পরিদর্শন। এর আগে আমি ২০১৯ সালে বাংলাদেশের শীপ রিসাইক্লিং শিল্প পরিদর্শন করেছি। সেই সময় থেকে বর্তমান বিবেচনা করে দেখলাম। পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আগের চেয়ে বেশি পরিবর্তন এসেছে ইয়ার্ডগুলো পরিবেশে। তাই বলতে পারছি এ শিল্পে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত উঁকি দিচ্ছে। আমরাও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী এবং খুবই আশাবাদী।

কেইজি টমোডার নেতৃত্বে পরিদর্শনে অংশ নিয়েছেন ১৪ জাপানি। এরা হলেন, এন ওয়াইকে লাইনের জেনারেল ম্যানেজার ও জাপানিজ শীপ রিসাইক্লিং কমিটির সদস্য টাকুয়া কইজুমি, এনএস ইউনাইটেড কাইয়ুন কাইসা ও জাপানিজ রিসাইক্লিং কমিটির বিকল্প সদস্য হিরোকি তানাকা, ক্লাস এনকে’র ম্যানেজার টাকেশি নারেসী, এমএলআইটির পরিচালক ড. মাসানোরী যুসিদা, এনওয়াইকে লাইনের ম্যানেজার জিগামি নবয়ুকি, জেএসএ’র ডিপুটি ম্যানেজার ইয়ামাগামি হিরোয়ুকি, কেএর ডিপুটি জেনারেল ম্যানেজার কুদু ইয়াসুশি, এনকে ক্লাস টিএলডি তানিগুচি রাইয়ুয়া, ইন কর্পোরেশন জেএনএস অতসুকি সুমিয়ুকি, এমওএল এর তাকাহাসি নবয়ুকি ও আকিয়ামা নাইয়ুকি।

এর আগে বেলা ১১টায় কেআর শীপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ডে পৌঁছান ১৪ সদস্যের জাপানি প্রতিনিধি দল। এসময় কেআর শীপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ডের কর্ণধার ও কেআর গ্রুপের ডিরেক্টর তসলিম উদ্দিন প্রতিনিধিদের সদস্যদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। পরে প্রতিষ্ঠানটির সেমিনার কক্ষে এক আলোচনায় মিলিত হন সকলে।
আলোচনা সভায় জাপানি প্রতিনিধি দলের মতবিনিয়ম করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার তসলিম উদ্দিন ও কনসালটেন্ট মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব আলম। পরে প্রতিনিধি দল পুরো শীপ ইয়ার্ডটি ঘুরে দেখেন। বিশেষ করে স্ক্রাপ জাহাজ কাটার কাজ প্রত্যক্ষ করেন তারা। এসময় সিঁড়ি বেয়ে জাহাজের উপরে ওঠে দেখেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। পরে ইয়ার্ডের জরুরী চিকিৎসা ইউনিট, বর্জ্য সংরক্ষণাগার, এসবেস্টস সংরক্ষণাগার, নিরাপদ পানির প্লান্ট, শ্রমিকদের গোসল, ওয়াশ, খাওয়ার কক্ষ পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে তারা এই শীপ ইয়ার্ডের পরিবেশ, শ্রমিকদের নিরাপত্তা, বর্জ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাসহ নানা ইস্যুতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। একইসাথে ইয়ার্ডের সার্বিক ব্যবস্থাপনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন তারা।

ক্লাস এনকে’র ম্যানেজার টাকেশী নারেশী বলেন, কেআর শীপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ড বাংলাদেশের চতুর্থ গ্রীণ শীপ ইয়ার্ড হতে যাচ্ছে। মোট ৪টি শীপ ইয়ার্ড আমাদের ক্লায়েন্ট হয়েছে। তার মধ্যে কেআর অন্যতম। খুব দ্রুত তারা সনদ পেতে যাচ্ছেন। সার্বিক অবস্থা সন্তোষজনক।

কেআর শীপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ডের কর্ণধার তসলিম উদ্দিন বলেন, আমরা হংকং কনভেনশন অনুসারে গ্রীণ শীপ ইয়ার্ড করতে উদ্যোগে নিই দু’বছর আগে। এখন আমরা পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সক্ষম হয়েছি। জাপানিজ প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করেছে। আশা করি ক্লাস এনকে সনদ খুব শীঘ্রই পাব। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়াতে আমাদেরকে গ্রীণ শীপ ইয়ার্ড করা জরুরী। এতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি ঘুরে দাঁড়াবে জাহাজ ভাঙা শিল্প।

পরিদর্শন শেষে ভাটিয়ারী গলফ এণ্ড কান্ট্রি ক্লাবে মধ্যাহ্ন ভোজ সারে জাপানি প্রতিনিধি দল। পরে তারা চট্টগ্রামের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্য রওয়ানা হন। সেখান থেকে আজ রাতেই জাপানের উদ্দেশ্য বাংলাদেশ ছাড়বেন তারা।

প্রসঙ্গত, গত চারদিন ধরে বাংলাদেশের ৩টি গ্রীণ ইয়ার্ড (পিএইচপি, এস এন কর্পোরপশন, কবির শীপ ব্রেকিং ইয়ার্ড) ও বেশ কয়েকটি নন গ্রীণ ইয়ার্ড পরিদর্শন করেন এই প্রতিনিধি দলটি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ শীপ ব্রেকার্স এণ্ড রিসাইক্লার্স এসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে মিলিত হন তারা।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।