ঘূর্ণিঝড় মোখা—জলোচ্ছ্বাসের হুমকিতে সেন্টমার্টিনসহ কক্সবাজার উপকূল

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজারের ওপর দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করবে। এর প্রভাবে ১৫ থেকে ২০ ফুট জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষণা সংস্থাগুলো। এতে সমুদ্র কন্যা সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া, মহেশখালীসহ বিস্তীর্ন উপকূল জলোচ্ছ্বাসের হুমকিতে রয়েছে।

শুক্রবার (১২ মে) সকালে আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের বরাতে এ তথ্য জানান কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল (পলাশ)। তিনি বলেন, আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে বিভিন্ন দেশের তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে মোখার গতিবেগ ১৮৫ থেকে ২০৪ কিলোমিটার হতে পারে। এর প্রভাবে ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে। ফলে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে সেন্টমার্টিনের অধিবাসীদের মূল ভূ-খণ্ডে স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছেন গবেষক মোস্তফা কামাল (পলাশ)।

সরকারের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১০ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে-
“দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ (ECP: 987 hPa) উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় (১৩.১° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.০° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এটি আজ (১২ মে) ভোর ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হজাার ৯৫ কি.মি. দক্ষিণ- দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ২ (দুই) নম্বর (পুনঃ) ২ (দুই) নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হলো।”

প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হলে সেটি হয় সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়। বাতাসের গতিবেগ ৮৮ থেকে ১১৭ হলে তাকে বলা হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়। আর বাতাস যদি ১১৭ থেকে ২২০ কিলোমিটার বেগে বয়, তবে তা হয় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। আর ২২০ কিলোমিটারের ওপরে বাতাসের গতিবেগ উঠলে তাকে সুপারসাইক্লোন বলা হয়। সে হিসেবে মোখা এখন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়।

ঘূর্ণিঝড়ের লাইভ দেখুন:
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়-মোখা

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।