করোনাকালে সৌদিআরবগামী চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুই হাজার ১৫৪ পরিবারের মাঝে সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় পাঁচ কোটি ৪১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকার চেক বিতরণ করেছে।
সোমবার (২১ মার্চ) চট্টগ্রামে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে আয়োজিত ‘মুক্তির উৎসব ও সুবর্ণজয়ন্তী মেলা’য় প্রবাসী কর্মীদের পরিবারের কাছে অনুদানের চেক হন্তান্তর করা হয়।
মো. মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত চেক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ধীন ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ড এর পরিচালক (প্রশাসন ও উন্নয়ন) মুশাররাত জেবীন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক ও সরকারের যুগ্ম সচিব মুশাররাত জেবীন প্রবাসীদের কল্যাণে সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে জেলা জনশক্তি-কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরো ও সাথে ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ড নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ দেশ থেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশ্বের কোন্ কোন্ দেশে কর্মী পাঠানো যায় সে লক্ষ্যে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক। বিদেশে গিয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে। অসুস্থতার গুরুত্ব বুঝে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা খরচ সরকারীভাবে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, বিদেশে কোনো কর্মী মারা গেলে তাদের মরদেহ দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ নিজ এলাকায় নিয়ে যেতে কারও সামর্থ্য না থাকলে তাদের জন্য ফ্রি অ্যাম্বলেন্স সেবা দেয়া হয়। মরদেহ দাফন বা সৎকারের জন্য সর্বোচ ৩৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। বৈধভাবে বিশেগমনকারী মৃত কর্মীর পরিবারকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে বড় একটা অবদান রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের। তাদের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংরক্ষণ করা হয়েছে। যে কোনো বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় নেওয়ার আহ্বান জানান।
স্বাগত বক্তব্যে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, প্রবাসীরা দেশের জন্য যা করছে তার তুলনায় এই অনুদান অতি সামান্য। তবুও সরকার প্রবাসীদের পাশে থাকার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ। তিনি বিদেশগামীদের সরকারি নিয়ম-কানুন মেনে বিদেশ যাওয়ারও আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, কোভিড-১৯ মহামারিজনিত কারণে সৌদি আরব প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে দেশটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে হোটেল কোয়ারেন্টিন থাকার বিধি বিধান সংযুক্ত করে সৌদি সরকার। ফলে সৌদি আরব প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা সংকটে পড়ে। বাংলাদেশে সরকারের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ সংকট উত্তরণে এই ভূর্তকি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
তারই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় মোট দুই হাজার ৩৩ জনের অনুকূলে ৫ কোটি ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রবাসী কর্মীদের ১২১ জন মেধাবী সন্তানকে শিক্ষাবৃত্তি বাবদ ৩৩ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়ার প্রবাসী সিরাজুল ইসলামের পিতা নুরুল ইসলাম তার পরিবারের পক্ষে ২৫ হাজার টাকার চেক গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, পেটের দায়ে আমার ছেলে সৌদি গিয়েছে। করোনার কারণে হোটেলে ছিল। সেই খরচের টাকা আমরা দিয়েছি। সরকার আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। অনুদানের টাকা পেয়ে আমরা আনন্দিত।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।