সারাদেশের মতো বন্দর নগরী চট্টগ্রামেও চলছে বিএনপি-জামায়েতের ডাকা অবরোধ কর্মসূচি। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রাত থেকে এখনও পর্যন্ত অবরোধে ৩টি গাড়িতে আগুন, বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর এবং বিএনপির ১৪ জনকে আটকের ঘটনা ঘটেছে। এদিন বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া চট্টগ্রামের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও সড়কে ছিলো কম যানবাহন এবং মানুষের উপস্থিতি।
সরজমিনে নগরীর আগ্রাবাদ, বড়পুল, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকবাজার, জিইসি মোড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে স্বাভাবিকভাবে চলছে যানবাহন। তবে এসব এলাকায় প্রতিদিন যানবাহনের ব্যাপক চাপ থাকতো। প্রায় সময় লেগে থাকতো যানজটও। কিন্তু আজ সড়কে যানচলাচল কম ছিল। তবে বিকেল হতে হতে যানবাহন এবং মানুষের আনাগোনাও বেড়েছে সড়কে।
জানা গেছে, গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে নগরীর জিইসি মোড় এলাকাস্থ গরীবুল্লাহ শাহ মাজার এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি মিনিবাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নির্বাপণ করে। এরপর রাত সোয়া ৩টার দিকে বায়েজিদ বোস্তামী থানার চট্টগ্রাম-হাটহাজারী রোডের ট্যানারি বটতলা এলাকায় আরেকটি সিটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ১০ নম্বর বাসটিতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা আগুন ধরিয়ে দেয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। অবরোধ শুরুর পর সকাল ৬টার দিকে নগরের ইপিজেড থানার সল্টগুলা ক্রসিং এলাকায় একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। পুলিশ জানায়, বাসটি যাত্রী তোলার জন্য দাঁড়ায়। ওই সময় যাত্রীবেশে দুজন উঠে বাসে আগুন দিয়ে দ্রুত নেমে পড়েন।
এছাড়া সকালে অবরোধের সমর্থনে মিছিল থেকে নগরীর সিটি গেট এলাকায় একটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করা হয়েছে। নগরীর নতুন ব্রিজ এলাকায় সড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। এসব ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও জনমনে কিছুটা আতঙ্ক পরিলক্ষিত হয়েছে।
১৪ জন আটক, ৭ ককটেল উদ্ধার
এদিকে নগরীর আকবর শাহ থানা এলাকা থেকে গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ১৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে থানার সিটি গেটের কাছে সড়কের পাশ থেকে সাতটি ককটেল উদ্ধার করা হয়।
আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, সকালে অবরোধের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে গাড়ি ভাঙচুর করছিল অভিযুক্তরা। এ সময় তারা চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সাতটি ককটেল উদ্ধার করা হয়। আটকদের বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে অবরোধে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এবং মিরসরাইয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়। গতকাল রাত থেকে চট্টগ্রামের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তাদের টহল শুরু হয়।
চট্টগ্রাম ৮ বিজিবির পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকী বলেন, মহাসড়কের নিরাপত্তায় বিজিবি টহল শুরু করেছে। দুই উপজেলায় মোট চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আটটি দলে ভাগ হয়ে তারা টহল কার্যক্রম চালাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার ঢাকায় সরকার পতনের এক দফা দাবিতে মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। সমাবেশ চলাকালে নয়াপল্টনের আশেপাশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে যায় দলটির নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়। আহত হয় অনেকে। এরপর বিএনপি রোববার হরতালের ডাক দেয়। পরবর্তীতে মঙ্গলবার থেকে ৭২ ঘন্টার অবরোধের ডাক দেয় দলটি। পরে একই দাবিতে জামায়াত ইসলামও অবরোধের ডাক দেয়।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।