চট্টগ্রামে কমেছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা

চলতি মাসের শুরু থেকে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ভয়াবহ আকার ধারণ করে ডেঙ্গু। গত এক সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন শতক ছুঁয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। এছাড়া শিশু-কিশোরীসহ মারাও গেছেন বেশ কয়েকজন। তবে স্বস্তির বিষয় হলো গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুহীনের সাথে কমেছে আক্রান্তের সংখ্যাও। তবে এখনও পরিস্থিতি পাল্টে যায়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুক্রবার (২৮ জুলাই) জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কারও মৃত্যু হয়নি। তবে এ দিন ভাইরাসজনিত এ রোগে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ৩৫ জন। এতে করে জেলায় এ বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৪৪ জনে এবং মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ২৫ জনে।

এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ২৭৩ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯৬ জন, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ২২ জন এবং জেলার অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে ১৫৫ জন ভর্তি রয়েছেন। বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ১৭১ জন।

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নানামুখী কর্মসূচি পরিচালনা করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। গত ৫ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে নির্মাণাধীন ভবনের নিচে, ফুলের টব, ড্রাম ও ছাদে জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা পাওয়ায় ১৩১টি মামলায় ১১ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে চসিক।

চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী জানিয়েছেন, মশা নিধনে নিয়োজিত স্প্রেম্যানের সংখ্যা ২২০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ জনে উন্নীত করা হয়েছে। ৩০০টি স্প্রে মেশিন ও ১২০টি ফগার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে মশা নিয়ন্ত্রণে। বর্তমানে ১০ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড, ৩ হাজার লিটার লার্ভিসাইড ও ৫,০০০ লিটার ন্যাপথা মজুদ রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাদলের সুপারিশের আলোকে মসকুবান নামীয় ভেষজ ওষুধ ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। এডাল্টিসাইড হিসেবে ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেক্টিসাইড, লার্ভিসাইড হিসেবে টেমিফস ৫০ ইসি ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ এলডিও এবং এইচএসডি (কালো তেল) কেনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিটিআই ও নেভোলিউবণ ওষুধ সংগ্রহ করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, জ্বর দেখা দিলে ব্যথানাশক ওষুধ খেলে ডেঙ্গু আরো মারাত্মক রূপ ধারণ করে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া যাবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মশার জীবনপদ্ধতি বদলে যাচ্ছে, তাই মশা নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, সামনের দিনগুলোতে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। রোগীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যাও। হাসপাতাল চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর বাইরেও অনেক ডেঙ্গু রোগী বাড়িতে এবং ডাক্তারদের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা নিচ্ছেন, ফলে সরকারি এই হিসাবের বাইরেও আরও অনেক রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন।

তিনি সকলকে সচেতন থেকে সব স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করার পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে ডেঙ্গুর জন্য বিশেষায়িত সেবা চালুর আহ্বান জানান।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।